Ajker Patrika

মৌসুমের শুরুতেই মরে যাচ্ছে চিংড়ি: দিশেহারা চাষিরা

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ১১: ৫৯
মৌসুমের শুরুতেই মরে যাচ্ছে চিংড়ি: দিশেহারা চাষিরা

পাইকগাছায় মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন ঘেরে ভাইরাসজনিত কারণে মারা যাচ্ছে বাগদা চিংড়ি। এতে মৌসুমের শুরুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। 

মৎস্য বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনাবৃষ্টি, ঘেরে পানিস্বল্পতা, অতিরিক্ত পোনা মজুত, তাপমাত্রা ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছ মরে যেতে পারে। এ কারণে চাষিরা এটাকে ভাইরাস সংক্রমণ বলে ধারণা করছেন। আবার অনেকে মনে করছেন পানি ও খাদ্যই চিংড়ির ব্যাপক মড়কের জন্য দায়ী। বাগদা চিংড়ির মড়ক কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এতে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে উপজেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৩০ হাজার হেক্টর, যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে লোনাপানির চিংড়ি চাষ। এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার চিংড়িঘের রয়েছে। এ বছর উপজেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিক টন। তবে যেভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবন উপকূলীয় এ উপজেলায় আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় লোনাপানির চিংড়ি চাষ। সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের ফলে মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণেও চিংড়ি মাছ মরে যেতে পারে।

দেলুটি ইউনিয়নের চিংড়িচাষি কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আমার ২০ বিঘার একটি মৎস্যঘের রয়েছে। বছরের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করে বাগদা পোনা ছেড়েছি। কিন্তু ঠিক ৪২ দিনের মাথায় মাছ মরতে শুরু করে। আমি উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিলেও মাছ মরা বন্ধ হয়নি। এই ঘেরের মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। তাই এ বছর সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’ 
 
লতা ইউনিয়নের অসিত বরণ বলেন, ‘আমার ৪০ বিঘার একটি মাছের ঘের রয়েছে। গত দুই বছর ঘেরে ভালো মাছ হয়নি। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর ঘের করেছি। কিন্তু বছরের প্রথম থেকেই মাছ মরতে শুরু করেছে। একদিকে সমিতির কিস্তির টাকা, অন্যদিকে সংসার চলাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’

চিংড়িচাষি রেজাউল করিম জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতেই ঘেরে দেখা দিয়েছে চিংড়িতে মড়ক। এখন পর্যন্ত অনেকে মাছ বিক্রি করতে পারেননি। অনেক ঘেরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সব মাছই মরে গেছে।

ঘোষাল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অনেকেই লাভের আশায় বছরের পর বছর ধারদেনা করে এই চাষাবাদ টিকিয়ে রাখেন। সফলতা না আসায় একসময় ঋণের চাপ সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। দুই-এক বছর মাছ কিছুটা ভালো হওয়ায় ফের কোমর বেঁধে মাঠে নামেন চাষিরা। তবে মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি ঘেরে আবারও মড়ক অব্যাহত থাকায় নতুন করে বন্ধের উপক্রম হয়েছে সম্ভাবনাময় এই শিল্প।

এ বিষয়ে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, বাগদা চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর লবণসহিষ্ণু মাত্রা হলো সর্বোচ্চ ২৫ পার্টস পার থাউজেন্ড (পিপিটি)। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পরিবেশের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। চিংড়ি চাষের জন্য যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, তা ঘেরগুলোতে নেই। অন্যদিকে বাগদা চিংড়ি পোনার দাম কম হওয়ায় চাষিরা অতিরিক্ত পোনা ছেড়েছেন। সে কারণে অতিরিক্ত পোনা ছাড়ার কারণে খাদ্যঘাটতির পাশাপাশি মাছের ঘেরের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৫০০ মাছ ছাড়ার কথা থাকলেও চাষিরা বিঘাপ্রতি ৫ হাজার মাছ ছেড়েছেন। এ কারণে খাদ্যঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ঘেরে পানি বৃদ্ধি, খাদ্য ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ ছেড়ে চাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র, অছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত