Ajker Patrika

তিন মণ পাট বিক্রির টাকায় মনোনয়ন, ছাগল বিক্রির টাকায় আপ্যায়ন   

মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
তিন মণ পাট বিক্রির টাকায় মনোনয়ন, ছাগল বিক্রির টাকায় আপ্যায়ন   

ভোটে দাঁড়ানো তাঁর নেশা। এখন পর্যন্ত চার বার চেয়ারম্যান ও এক বার সদস্য পদে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এক বারও জয় লাভ করতে পারেনি। তাতে কি? পরাজয়ের গ্লানি গায়ে না মেখে আগামী ২৮ তারিখ তৃতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে ৬নং মহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছে তিনি। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক মোটরসাইকেল। বলছিলাম ৭০ বছর বয়সী আতিয়ার রহমানের কথা। বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামে।

 শীতকালে খেজুর গাছ আর গ্রীষ্মকালে তালগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন আতিয়ার রহমান মিয়া। বসতবাড়ির ১০ শতাংশ জমিই তাঁর সম্বল। নির্বাচনে দাঁড়ানোই তাঁর নেশা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলেই অংশ নেন তিনি। সবকিছু বিক্রি করে এবারও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই উপজেলার আটটি ইউনিয়নে আগামী ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আতিয়ার রহমান জানান, তাঁর টাকা-পয়সা নেই। ঘরে থাকা তিন মণ পাট ও পাটকাঠি বিক্রি করে জোগাড় করেছেন সাত হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। স্ত্রীর পোষা একটি ছাগল বিক্রি করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সেই টাকা দিয়ে ভোটারদের চা ও  পান খাইয়ে আপ্যায়ন করছেন।

পোস্টার ছাপানো ও মাইকিং করারও টাকা নেই আতিয়ার রহমানের। এক ব্যক্তি কিছু পোস্টার ছাপিয়ে দিয়েছেন তাকে। প্রতিবেশী একজন সদস্য প্রার্থীর মাইক ধার নিয়ে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। মাইক নিয়ে ভ্যানে চড়ে আতিয়ার রহমান একাই তাঁর মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকার অনেকে হাসাহাসি করছেন। এতে আতিয়ার রহমানের তেমন মাথা ব্যথা নেই। পায়ে হেঁটে রাত-দিন গ্রামে, হাট-বাজারে তিনি প্রচার চালাচ্ছেন।  

আতিয়ার রহমান আরও জানান, তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও নৌকা প্রতীককে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। দলের সুদিন-দুর্দিনে সব কর্মসূচিতে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করলেও স্বীকৃতি পাননি তিনি।

আতিয়ার রহমানের ইচ্ছে জীবনে একবার হলেও চেয়ারম্যান হবেন। এবারের নির্বাচনে জয় লাভের বিষয়ে তিনি খুব আশাবাদী। তাঁর বিশ্বাস জনগণ তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।

জানা গেছে, গোপালনগর গ্রামে সরকারের দেওয়া দুই কক্ষের একটি ঘরে স্ত্রী হাজেরা বেগমকে নিয়ে বাস করেন আতিয়ার রহমান। তাঁর দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সফর আলীর আলাদা সংসার করেন। ভূমিহীন বর্গাচাষি আতিয়ার রহমানের নিজের কোনো জমি নেই। খেজুর ও তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। সেই রস দিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি এবং বর্গা জমি চাষ করে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করে চলে তাঁর সংসার।

স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, ‘তাঁর স্বামীর সারা জীবনের স্বপ্ন চেয়ারম্যান হওয়া। নির্বাচনে দাঁড়ানো তাঁর নেশা। কয়েকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও ভোট পাননি। আগে নিষেধ করতাম। এবার আর করিনি। হোক আর না হোক স্বামী যদি একটু শান্তি পায় তাতেই আমি খুশি।‘ 

প্রতিবেশী মতিয়ার রহমান শরীফ বলেন, ‘আগে নির্বাচন করতে গিয়ে বাড়ির জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন আতিয়ার রহমান। তাঁর সারা জীবনের ইচ্ছা চেয়ারম্যান হওয়া। অধিকাংশ ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি।’

মহম্মদপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কোরবান আলী বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আতিয়ার রহমানের মতো দরিদ্র ব্যক্তির ইউপি চেয়ারম্যান হওয়া সম্ভব নয়-এটাই বাস্তবতা। এ ছাড়া আমরা রাজনীতি করি-আমাদের পক্ষে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে কারও জন্য কাজ করা বা কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের’ নির্দেশ

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত