Ajker Patrika

আমাদের পেটের ভাষা কেউ বোঝে না, যৌনকর্মীর আক্ষেপ  

রাশেদ নিজাম, বানিশান্তা, খুলনা থেকে
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮: ৪৭
Thumbnail image

‘এক মাস হলো কোনো আয় নাই। এক বেলা রানলে দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। আমরা তো পতিতা, আমাদের পেটের ভাষা কেউ বোঝে না ভাই’, কথাগুলো বলছিলেন বানিশান্তা যৌনপল্লির বাসিন্দা রানী (ছদ্মনাম)।

কাগজে-কলমে খুলনার দাকোপ উপজেলার অধীন হলেও বানিশান্তা ইউনিয়নের মূল যোগাযোগ বাগেরহাটের মোংলার সঙ্গে—নদীর এপার-ওপার। দেশের নিবন্ধিত যৌনপল্লিগুলোর মধ্যে বানিশান্তাতেই বিদেশিদের আনাগোনা বেশি। ভাষার মাসে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে ‘স্বেচ্ছা দাসত্ব’ বরণ করা মানুষগুলো বললেন তাঁদের মনের কথা।  

এক বছরের সন্তানকে দেখিয়ে কষ্টের জানান দিচ্ছিলেন ২৮ বছরের এই নারী। আরও এক মেয়ে আছে তাঁর। নিজের কথা বাদ দিলেও দুই সন্তানের খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়েছে তাঁর জন্য; তাঁর সঙ্গে আছে আরও নানা সমস্যা।

নদীগর্ভে বিলীন হতে হতে কোনোমতে টিকে আছে এই পল্লি। এখন যেখানে অবস্থান, তার থেকে আরও আধা কিলোমিটারজুড়ে ছিল; সব খেয়েছে নদীতে। প্রতিবছরই ঘর তুলে আবার বাঁধতে হয় এখানকার যৌনকর্মীদের। নদীর পাড়েই তাঁদের ব্যবসা, নির্দিষ্ট জায়গায় চলাচল, তাই কিছু করার নেই।

সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে অল্পস্বল্প করে যৌন পেশা শুরু হয়। ১৯৫০ সালে মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর বিদেশি নাবিকদের আনাগোনা বাড়তে থাকলে জমজমাট হতে শুরু করে এ পেশাও।

 নদীগর্ভে বিলীন হতে হতে কোনোমতে টিকে আছে পল্লিপশুর নদের পাড়ের সেই বন্দর গত কয়েক দশক ধরেই ঝিমানো। ৯০ দশকের পর থেকে কমে গেছি বিদেশি নাবিক ও জাহাজ কর্মীদের যাতায়াতও। একসময় শুধু বিদেশি খদ্দের ছাড়া মনোরঞ্জন না করা যৌনকর্মীরা এখন দিন চেয়ে থাকেন, কেউ একজন আসুক। অন্তত হাঁড়িতে চাল চড়ানোর মতো আয় হোক।

বর্তমানে এখানে আছেন ৯৫ জন যৌনকর্মী। তাঁদের অর্ধেকেরই বয়স ৫০ এর বেশি, সর্বোচ্চ ৮৭ বছরেরও আছেন। এ তথ্য দিলেন বানিশান্তা নারী জাগরণী সংঘের সভাপতি রাজিয়া বেগম। তিনিই এখানকার একমাত্র কণ্ঠস্বর।

রাজিয়া বললেন, ‘কারও কাছে হাত পাততে হয়নি আমাদের। কিন্তু এখন ব্যবসার যে অবস্থা, না খেয়ে মরার জোগাড়। রোহিঙ্গা আসার পর বানিশান্তায় কাজ করা এনজিওগুলো চলে গেছে কক্সবাজারে। আমাদের এখন আর কেউ দেখে না। ওদিকে ভাঙনে চালহীন হওয়ার মতো অবস্থা।’ 

রাজিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের এখানকার নদীভাঙনটা যেন বন্ধ করা হয়। আশপাশে উদ্যোগ নিলেও যৌনপল্লির জমি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের কষ্টের ভাষা কারও কাছে পৌঁছায় না তো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত