Ajker Patrika

ইজারা নেই বন্ধ তিন পাটকলের

শামিমুজ্জামান, খুলনা
ইজারা নেই বন্ধ তিন পাটকলের

খুলনার বন্ধ হওয়া প্লাটিনাম, খালিশপুর ও স্টার পাটকল কারখানার ইজারা মিলছে না। এতে দেশি–বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানই আগ্রহ দেখায়নি। ইজারা নিতে দরপত্র আহ্বান করা হলেও এই মিলের জন্য কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। ১৭ জুন ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

শিগ্‌গির কারখানা তিনটি ইজারার জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনাও নেই কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে বন্ধ হওয়া পাঁচটি ক্রিসেন্ট, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, জেজেআই ও কার্পেটিং কারখানার জন্য ভারতীয় দুই প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। এদিকে এক বছরের বেশি সময় হলেও শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়ার পুরো পাওনা এখনো বুঝে পাননি। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।

অব্যাহত লোকসানের কারণে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ১ জুলাই থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়। বন্ধ মিলের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার পাটকলগুলো ৯৯ বছর মেয়াদে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বন্ধ পাটকলগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হবে। মালিকানা থাকবে সরকারের হাতে। লিজ–গ্রহীতারা চালু করতে না পারলে মিলগুলো ফেরত নেওয়া হবে।

বিজেএমসির খুলনা জোনের মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, খালিশপুর ও স্টার জুট মিল, প্লাটিনাম মিল লিজ নেওয়ার বিষয়ে দেশি–বিদেশি কারও সাড়া মেলেনি। ক্রিসেন্টসহ অপর মিলগুলো লিজ নিতে ভারতের মোহন জুট ও প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল দরপত্র জমা দিয়েছে। যাচাই–বাছাই শেষে শর্ত পূরণ হলে ডিসেম্বরে মিল চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ইনভাইটেশন ফর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) স্তর শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত কাজ ২০২১ সালের মধ্যেই শেষ হতে পারে। এরপরই  লিজ বা ইজারা গ্রহীতাদের হাতে হস্তান্তর করা হবে।

গোলাম রব্বানী বলেন, গত অক্টোবরে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল ইজারা গ্রহণের জন্য চীনের একটি প্রতিষ্ঠান মিল পরিদর্শন করেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তারা আগ্রহ দেখায়নি। লিজ নিতে আগ্রহ দেখায়নি খালিশপুর ও স্টার জুট মিলেরও। তবে আপাতত মিল তিনটির নতুন করে দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা নেই বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, খুলনার যে পাঁচটি মিল লিজ নিতে দরপত্র জমা পড়েছে, এই মুহূর্তে তা নিয়ে কাজ চলছে। ওই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর ৩টি মিল নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে। 

মিল বন্ধ ঘোষণা করার পর গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় আট মিলের ৩৬ হাজার ৩৯৫ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ নগদ ৭২৯ কোটি টাকা এবং ২৭৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়ে পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিজেএমসির মালিকানাধীন জুট মিলগুলোর বার্ষিক কাঁচা পাটের চাহিদা ১৯ লাখ ১১ হাজার মণ। বার্ষিক উৎপাদন হোসিয়ান ৩২ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন, স্যাকিং ৬৫ হাজার ৯৩ মেট্রিকটন ও সিবিসি ৭ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন। যাত্রার শুরুতে মিলের শ্রমিক ছিলেন ২০ হাজার ৬১৬ জন। বন্ধ থাকার আগ পর্যন্ত সাত মিলের শ্রমিক ৩৬ হাজার ৩৯৫ জন। তার মধ্যে স্থায়ী ১০ হাজার ৩৬৪ জন এবং বদলি শ্রমিক ২১ হাজার ৩৯১ জন। বাকিরা অবসরের শ্রমিক। 
এদিকে বন্ধ হওয়া পাটকলের সব শ্রমিক এখনো পাওনা বুঝে পাননি। বন্ধের সময় ঘোষণা ছিল, নগদ এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। নগদ টাকা সবাই পেলেও এখনো পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পাওনা বুঝে পাননি বেশির ভাগ শ্রমিক। এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা জোনের মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, শ্রমিকদের পাওনার হিসাব করতে একটু সময় লাগছে। যাঁদের হিসাব করা হচ্ছে, তাঁদের পাওনা পর্যায়ক্রমে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে তাঁদের পাওনা দিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে মিলের শ্রমিকেরা এখনো স্বপ্ন দেখছেন কবে মিলে সাইরেন বাজবে। কবে মিল চালু হবে। এ ব্যাপারে প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল সিবিএর সাবেক সভাপতি মো. খলিলুর রহমান বলেন, `বন্ধের সময় কর্তৃপক্ষ বলেছিল তিন মাসের মধ্যে মিলগুলো চালু হবে। দীর্ঘ এক বছরেও মিল চালু হয়নি। বকেয়া না পেয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পাওনার হিসাব করতে কত দিন লাগে?’ তিনি দ্রুত মিল চালু এবং বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবি জানান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত