Ajker Patrika

পাওনার দাবিতে আশুলিয়ায় বন্ধ কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ১৯: ৫৯
পাওনার দাবিতে আশুলিয়ায় বন্ধ কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বকেয়া পাওনার দাবিতে আশুলিয়ায় বন্ধ পোশাক কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা। আজ বৃহস্পতিবার কাঠগড়ার আমতলা এলাকায় এই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের সরিয়ে দেয়। এর আগে বুধবার সকাল থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিতে থাকেন শ্রমিকেরা।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রম আইন অনুযায়ী আশুলিয়ার কাঠগড়ার আমতলা এলাকার ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১ হাজার ৭৬৫ জন শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না করে গত ২৩ এপ্রিল থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে শ্রমিকেরা তাঁদের পাওনা আদায়ের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মালিক পক্ষের লোকজন গা ঢাকা দেওয়া তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছিল না।

পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু এরপরও তাঁরা কোনো সুরাহা পাননি।

আরও জানা গেছে, শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গত ১৩ মে শ্রম আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আপস মীমাংসা বৈঠক ডাকেন। অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে ওই বৈঠকে আইনি প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রমিকের সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকলেও মালিক পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

বৈঠকে শ্রমিকেরা কারখানা লে অব চলাকালে ৫৪ দিনের খোরাকি ভাতাসহ বকেয়া পাওয়ানাদি পরিশোধের দাবি জানান। পাশাপাশি তাঁরা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা না হলে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব শ্রমিককে কর্মরত হিসেবে গণ্য করা এবং শ্রমিকদের অনলাইন ডেটা ক্লিয়ার করে রিলিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

কারখানার শ্রমিক শারমিন আক্তার বলেন, ‘কারখানা বন্ধ করার আগেই মালিকপক্ষ আমাদের বেতন নিয়ে ঝামেলা করছিল। এরপরে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই গত এপ্রিল মাসে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হলেও মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বেতনসহ ঈদ বোনাস এবং শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলের কাছে ধারণা দিয়েছি। কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ কারণে বাধ্য হয়ে বুধবার সকালে আমরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের কারখানার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।’

শ্রমিক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘তিন মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস না পেয়ে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। বাসা ও দোকানমালিকদের বকেয়া পরিশোধের তাগাদায় কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।’

আশিক নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের এবারের ঈদ আনন্দই মাটি হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার বাড়তি ঝামেলা যোগ হয়েছে পুলিশের হয়রানি। এর আগে মালিকপক্ষের দায়ের করা একটি মামলায় পুলিশ অনেক শ্রমিককে খোঁজাখুঁজি করছে।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘একদিকে শ্রম আইন অনুযায়ী সমুদয় পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আর্থিক সংকটের মধ্যে ফেলেছে। অন্যদিকে কয়েক শ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে। যা খুবই অমানবিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে গত ১৩ মে যেসব চুক্তি বা সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি।’

যোগাযোগ করা হলে শিল্প পুলিশ-১-এর (আশুলিয়া) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাওনা পরিশোধ না করেই মালিক পক্ষ কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছে। এর পর থেকে মালিকদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাসসহ যাবতীয় পাওনা পরিষদের বিষয়টি ঝুলে আছে।’ শ্রমিকদের নামে মামলা ও হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত