Ajker Patrika

পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে হরিরামপুরের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ

মাহিদুল ইসলাম মাহি, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) 
আপডেট : ১৬ মে ২০২৪, ১৫: ৩৫
Thumbnail image

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদী তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচি, মালুচি পশ্চিমপাড়া, কুশেরচর, কোর্টকান্দি ও বাগমারা। তাতে আতঙ্কে রয়েছে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছরের অব্যাহত পদ্মার ভাঙনে ১৩টি মৌজার ১২টিই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার ভাঙনে এ ইউনিয়নের ৭০-৭৫ শতাংশ এলাকা নদীতে চলে গেছে। গত দুই বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকানিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে গেছে। এক মাস আগে নদীতে জোয়ারের পানি আসতেই উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি থেকে শিবালয় উপজেলা শুরুর প্রান্তে মালুচিঘাট এলাকায় তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন দেখা দিলে কয়েক বিঘা ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নদীতীরবর্তী কৃষিজমির অনেক স্থানে ৪০-৫০ ফুটজুড়ে ফাটল ধরেছে। নদীতীরবর্তী স্থানে পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় জোয়ারের পানি বাড়ার সঙ্গে তীব্র স্রোত তৈরি হয়েছে। মালুচি গ্রামের হুকুম আলী, পান্নু, শুকুর বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি, কুশিয়ারচর গ্রামের আইয়ুব আলী, হুকুম আলী, ওয়াহাব আলীসহ কয়েকটি বাড়ি ও বসতঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।

মালুচি গ্রামের বাসিন্দা হাসেন আলী বলেন, ‘১২ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে ১৪-১৫ বছর আগে পশ্চিম মালুচি গ্রামে বাড়ি করছি। তাও ভাইঙ্গা যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে।’

একই গ্রামের গোপাল সরদার বলেন, ‘একবার নদীতে ভাঙার পর বাড়ি করছি। এ বাড়িও পদ্মাপারেই। যেকোনো সময় ভাঙতে পারে। এ এলাকার পদ্মাতীরে আগে কখনো জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। তাই দ্রুত জিও ব্যাগ না ফেললে এই ইটের রাস্তাসহ পুরো এলাকা নদীতে ভাইঙ্গা যাইব।’

একই গ্রামের নোয়াব আলী বলেন, ‘কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও আমগো এদিকে জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। শিবালয় উপজেলা শুরুর পয়েন্টে জিও ব্যাগ পড়লেও মাঝে পড়েনি।’
 
পদ্মার পাড় ভেঙে পড়ছে নদীতে। ছবি: আজকের পত্রিকাকাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, ‘কয়েক বছরের অব্যাহত পদ্মার ভাঙনে ১৩টি মৌজার ১২টি মৌজাই পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু গৌড়বোরদিয়া মৌজা বাকি রয়েছে। গত দুই বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকানিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এ বছর কোটকান্দি ওসমানের বাড়ি থেকে মালুচি ঘাট পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কুশিয়ারচর বিল্লাল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও তারপর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ পড়েনি। এ বছর কোটকান্দি এলাকায় জিও ব্যাগও নদীতে ধসে পড়ছে। বিষয়টি মাসিক সমন্বয় সভায় ইউএনও মহোদয়কে এবং ফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা কাঞ্চনপুরের মালুচি এলাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

পদ্মার পাড় ভেঙে পড়ছে নদীতে। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হরিরামপুরের বেশির ভাগ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। কাঞ্চনপুরের কোর্টকান্দি থেকে মালুচিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার, কাঞ্চনপুরে আরও ৫০০ মিটার এবং আজিমনগর, সুতালড়ি ও লেছড়াগঞ্জ চরাঞ্চলে ৫০০ মিটার করে ২ হাজার ৭০০ মিটার নদীতীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের জন্য মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরাবর বাজেটের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বাজেট অনুমোদন পেলেই আমরা এসব এলাকায় কাজ শুরু করতে পারব।’

উল্লেখ্য, ৫০ বছর আগে থেকে পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে ঘরবাড়ি জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। গত সাত-আট বছরে উপজেলার ধূলশুড়া ইউনিয়ন থেকে কাঞ্চনপুর পর্যন্ত নদীভাঙন রোধে তীর রক্ষা কাজে শত শত কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত