Ajker Patrika

নির্বিঘ্নে হিজাব-নিকাব পরিধানের পরিবেশের দাবি ঢাবির একদল শিক্ষার্থীর 

ঢাবি প্রতিনিধি
নির্বিঘ্নে হিজাব-নিকাব পরিধানের পরিবেশের দাবি ঢাবির একদল শিক্ষার্থীর 

ক্লাস, প্রেজেন্টেশন ও মৌখিক পরীক্ষাসহ ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় নির্বিঘ্নে হিজাব-নিকাব পরিধানের পরিবেশ, পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল নারী শিক্ষার্থী। 

আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনও করেন নারী শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর এ স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপিতে পাঁচ দফা দাবির কথা উল্লেখ করা হয়। 

দাবিগুলো হলো
বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করতে হবে; পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষার পূর্বেই নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। 

দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে। 

বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা অথবা কটূক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে; হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে এবং ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

মানববন্ধনে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ’সম্প্রতি বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি নোটিশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেই নোটিশে পরিচয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার অজুহাতে সব ধরনের পরীক্ষা ও সংযোগ ক্লাসে বিভাগের সকল শিক্ষার্থীকে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই নোটিশের ফলে বিভাগের প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। নোটিশের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মুসলিম হিসেবে আমরা এই ঘটনায় মারাত্মকভাবে ব্যথিত হয়েছি এবং এটিকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে।’ 

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান এবং আমাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদে আমরা আপনার (উপাচার্য) নিকট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরছি। আমরা প্রত্যাশা করছি অভিভাবকত্বের দাবি থেকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের সংকটাপন্ন ক্যারিয়ার বাঁচাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল নারী শিক্ষার্থীপাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করার জন্য স্মারকলিপিতে উপাচার্যকে অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা। 

স্মারকলিপির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটি মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়। সকলের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা হয়। ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করুক সেটা আমরা চাই না, আবার কারও মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে সংকুচিত করে দেখা সেটাও কাম্য নয়। সে হিসেবে সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা জরুরি।’ 

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষার ক্ষেত্রে সকলের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর রীতি রয়েছে কিন্তু কেউ যদি আঘাত করে কোনো কিছু করে সেটা কখনো কাম্য নয়। আশা করি আমাদের সহকর্মীরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’ 

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১১ তারিখে সকল শিক্ষার্থীকে ‘টিউটোরিয়াল প্রেজেন্টেশন, মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীকে পরিচয় শনাক্ত করার জন্য কানসহ মুখমণ্ডল পরীক্ষা চলাকালীন দৃশ্যমান রাখতে হবে’ মর্মে একটি নোটিশ দেয় বাংলা বিভাগ। 

বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখে বিভাগের একাডেমিক কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে উল্লেখ করা হয়। 

নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এ সিদ্ধান্ত প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকগণ ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেছেন। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্ত পালনে শৈথিল্য দেখাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ৬ তারিখে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখের গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে যারা পালন করবে না তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে তৈরি হচ্ছে মানিব্যাগ, জুতা

রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে জামায়াত নেতার সুপারিশ, উপ-উপাচার্যের ফেসবুক থেকে ভাইরাল

স্ত্রীকে ঘরে রেখে তালা দিয়ে পুড়িয়ে মারলেন স্বামী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত