Ajker Patrika

সোনালুর অভ্যর্থনা পথে পথে 

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ১২: ১১
সোনালুর অভ্যর্থনা পথে পথে 

এখন সময় সোনালু ফুলের। সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ-সোনালি ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। সড়ক-মহাসড়কে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশে ছোট-বড় সোনালু ফুলে মুগ্ধ পথচারী। থোকায় থোকায় সোনালু ফুল দেখে মনে হয় ঝাড়বাতি ঝুলে আছে। ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে ওঠা পথিকের মনে আসে প্রশান্তি। তবে দিনে দিনে কমে যাচ্ছে এই গাছের সংখ্যা। 

মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার মোড়, দৌলতপুর-বরংগাইল সড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা, পাঁচুরিয়া, মহাদেবপুর, উপজেলা পরিষদ চত্বর, বানিয়াজুরী, রাথুরা-তরা রাস্তা, জাবরা, বালিয়াখোড়া, সিংজুরী, তেরশ্রী রাস্তা, সরকারি ডিগ্রি কলেজের পেছনের রাস্তা, পঞ্চরাস্তা মোড়, বরটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক, নালী-কেল্লাই সড়কের দুপাশে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা-পুখুরিয়া রাস্তা, বাষ্টিয়া খেলার মাঠ, পয়লা গ্রামীণ রাস্তা, ভোর বাজার, আশাপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সোনালুর দোল দেখে মনে হয় এ যেন প্রকৃতির হলুদাভ উষ্ণ অভ্যর্থনা। 

স্কুল শিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগম বলেন, রোদ্দুর আর গরমে ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে সোনালু ফুল প্রকৃতিতে মেলে ধরেছে তার আপন রঙ। চোখ জুড়িয়ে যায় থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা সোনালু ফুলের সৌন্দর্যে। 

সোনালুগাছ বাঁদরলাঠি নামেও পরিচিত। ছবি: আজকের পত্রিকাজেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জে এই গাছ বাঁদরলাঠি নামেই বেশি পরিচিত। একসময় সচরাচর দেখা মিলত। এক দশকে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে সোনালু গাছের সংখ্যা। তবে ইদানীং অনেক নার্সারি ব্যবসায়ী কলম জাতের সোনালু চারা বিক্রি করছেন। 

বানিয়াজুরী সিফাত নার্সারির ম্যানেজার নূর ইসলাম বলেন, গত বছর থেকে সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার কলম চারা বিক্রি করছি। আকারভেদে প্রতিটি চারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

উপজেলার জোকা যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি সোনালু গাছ ভরে আছে ফুলে। মাটিতে বিছিয়ে রয়েছে অজস্র পাপড়ি। এখানে ছবি তুলছে বানিয়াজুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তুর্য্য, শান্তা, সুমন, তুলি, জাবির হোসেন। তারা বলে, যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে কাজে আসছি, দেখতে পেলাম সোনালু ফুল খুব সুন্দরভাবে রং ছড়াচ্ছে। অনেকগুলো ছবি তুললাম, ফেসবুকে পোস্ট করে দিয়েছি। 

সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তুহিন সুলতানা বলেন, সোনালু দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি নামেও আছে বাহার। এই ফুলকে সোনাইল, সোঁদাল, বাঁদরলাঠি নামে স্থানীয়ভাবে ডাকে। ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। বৈজ্ঞানিক নাম কাসিয়া ফিস্টুলা। আদিনিবাস পূর্ব এশিয়া। তবে হাজার বছর আগেও এই গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। 

রাস্তার পাশের সোনালুগাছ মুগ্ধ করেছ পথচারীদের। ছবি: আজকের পত্রিকাকবি দোলা রায় বলেন, ‘আমরা শৈশবে বাড়ির আশপাশেই অনেক সোনালু গাছ দেখেছি। এই ফুল দিয়ে মালা গেঁথেছি, খোঁপা সাজিয়েছি। এই গাছ কমে গেছে। কবি-লেখকদের এক অনবদ্য উপাদান হলুদিয়া সোনালু ফুল।’ 

মানিকগঞ্জ সাধনা ঔষধালয়ের চিকিৎসক উত্তম পালিত বলেন, এই গাছের পাতা ও বাকল ভেষজ গুণে ভরপুর; ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত হয়। ফলের শাঁস বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে উপকারী। 

প্রকৃতি গবেষক সুবীর সরকার বলেন, এই গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয় এবং গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালুগাছ রোপণ করে না। প্রাকৃতিকভাবে যা হয়, তার ওপর ভর করেই হলুদ-সোনালি রঙের সৌন্দর্য বিতরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনালু। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে সোনালু অন্যতম ফুল। এই গাছগুলো পরিবেশের জন্য উপকারী এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এর ফুল দৃষ্টিনন্দন শোভাবর্ধনকারী। এই গাছ প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে, বড় হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত