Ajker Patrika

বেঁচে থেকেও মৃত সরকারি নথিতে

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
বেঁচে থেকেও মৃত সরকারি নথিতে

জীবিত থেকেও সরকারি নথিপত্রে তারা মৃত! অদ্ভুত এই সমস্যা নিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়ছেন শরীয়তপুরের এমন বেশ কয়েকজন। বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা আর নাগরিক নানান কর্মকাণ্ড থেকে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তাঁদের মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর পর থেকেই নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন এসব মানুষ। সমাধানের জন্য ঘুরছেন সরকারের দপ্তরে দপ্তরে। 

ভোটার তালিকায় মৃত দেখানোয় বন্ধ হয়ে গেছে ষাটোর্ধ্ব ফুলমতি বিবির নামে বরাদ্দ বয়স্ক ভাতা। শরীয়তপুর জেলা সদরের আংগারিয়ার কাশাভোগ গ্রামে ঘটেছে এমন ঘটনা। তালিকায় মৃত থাকায় জীবিতদের তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য ইতি মধ্যে তিনি আবেদনও করেছেন উপজেলা নির্বাচন অফিসে। 

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ফুলমতি বিবি বলেন, `ভাতার টাহা উডাইতে সমাজ কল্যাণে গেছি। হেরা আমারে কয় আমনে মিত্তু (মৃত)। আমনে বয়স্ক ভাতা পাইবেন কই। অহন কি করমু আমি? হেরা নির্বাচন অফিসে যাইতে কইলো। হ্যানেও গেছি। হ্যারাও কি জানি টিপাটাপি কইরা দেইখ্যা কইলো আমনে তো মিত্তু, আমনের নাম তো মিত্তু দ্যাখাইন্যা হইছে। আমনে ভোট দিবেনইবা ক্যামনে আর ভাতাই পাইবেন ক্যামনে। পোলা লইয়্যা গ্যালাম ডিসি সাবের কাছে। ডিসি সাব কাগজে লেইখ্যা দিয়া আবোর নির্বাচন অফিসে যাইতে কইলো। তিন তালা পর্যন্ত গিয়া আবার ফিরত আইছি, কেউরে পাই নাই। আমার কার্ড বাতিল, আমার বয়স্ক ভাতা বাতিল, আমার ভোডও নেয় নাই। আমি বাইচ্যা থাকতে মিত্তু! আমারে কেডা মাইরা হালাইলো? আমি এই দ্যাশের নাগরিক না? কিয়ের লাইগ্যা আমার ভাতা পাইমু না? 

একই দশা গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের জালাল আহমেদের। কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমাবেন প্রবাসে। কিন্তু পাসপোর্ট করতে গিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। অনলাইনে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় মৃত হিসেবে। বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত তিনি। নিজেকে জীবিত করতে ছুটছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দপ্তরে। জেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয়ের সামনেই দেখা হয় জালালের সঙ্গে। 

জালাল বলেন, `পরিবারের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাসপোর্ট করতে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে শুনি আমি মৃত। সমস্যা সমাধানে দ্রুত যোগাযোগ করি নির্বাচন অফিসে। অন লাইনে সার্চ দিয়ে অফিস থেকে জানানো হয় সরকারি নথিতে আমাকে মৃত দেখাচ্ছে। আমি জীবিত থেকেও মৃত হলাম কি করে? এই প্রশ্নের কোন উত্তর তাঁরা দিতে পারেনি। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের আবেদন করেছি। জানি না কবে আমার এই সমস্যা সমাধান হবে? '

শরীয়তপুর পৌরসভার উত্তর বালুচরা গ্রামের তাললিমা বেগম এবারের পৌর নির্বাচনে ভোট দিয়ে গিয়ে ফেরত এসেছেন। তালিকায় তাঁরও নাম নেই। বেশ কয়েক মাস যাবৎ বয়স্ক ভাতার টাকাও বন্ধ তাঁর। এ দিকে একই এলাকার আনসার আলীও ভুগছেন একই সমস্যা নিয়ে। 

আনসার আলী বলেন, `হয়রানি হতে হচ্ছে। জীবিত মাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এমন দ্যাশে থাকি যেখানে জলজ্যান্ত মানুষ সরকারি কাগজে মৃত। আফসোস! চাকরি বাকরি, জমির দলিলপত্র, ভাতার টাকা, পাসপোর্ট এখন কিচ্ছু করা যাইতাছে না। যাদের ভুলে এমন ঘটনা ঘটেছে তাঁদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।' 

জেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয় সূত্র জানায়, জালাল আহমেদ আর ফুলমতির মতো এমন ৩৯টি আবেদন পাওয়া গেছে। তাঁরা বেঁচে থেকেও কাগজে কলমে মৃত। ২০১৮ সালে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম চলে। হালনাগাদে নতুন ভোটার সংযোজন এবং মৃত ভোটার কর্তন করা হয়েছে। ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম করার সময় মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শনাক্তকারী এবং ওই ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধির সত্যায়ন করা হয়। তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে নির্বাচন কার্যালয় এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বলেন, এ ধরনের সমস্যা নিয়ে যারা আসছেন তাঁদের সকল কাগজপত্র দেখে দ্রুত সমাধানের জন্য এনআইডি সেকশনে পাঠানো হচ্ছে। এ ধরনের ভুল আসলে কাম্য নয়। এতে সাধারণ মানুষ নানান হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কার বা কাদের গাফিলতিতে এমন বড় ধরনের ভুলের সৃষ্টি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমস্যার বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত