Ajker Patrika

এক বছরে ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯.৮%

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৪৯
এক বছরে ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯.৮%

ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২তে এসে দাঁড়িয়েছে, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। 

স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ২% (৩৮ দিন) সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করে। আর ২৬% (৫১০ দিন) চলনসই মানের বায়ু, ২৯% (৫৭৭ দিন) সংবেদনশীল বায়ু, ২২% (৪৪৩ দিন) অস্বাস্থ্যকর, ১৯% (৩৮৫ দিন) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ২% (৩৭ দিন) সময় দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে। 

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের এক দিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি, বায়ুমান বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং তা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। 

গত ছয় বছরে গড় বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১টার সময় বায়ুমান সূচক ছিল ১৬২, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ। রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে, যার কারণে এসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো রাতের বেলায় সিটি করপোরেশন কর্তৃক ঝাড়ু দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে,, যার কারণে বাতাসে ধুলোবালু উড়তে থাকে। রাতের বেলায় যেহেতু দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কম থাকে, সেহেতু ধুলোবালু বাতাসে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে বলে তিনি মনে করেন। 

ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, প্রতিটি স্থানের গড় বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েক গুণ বেশি। গবেষণা অনুযায়ী, আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি ৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭,৬২, ৬০,৬৩, ৫৯,৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মানমাত্রার প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি। 

সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ঢাকা নগরের বায়ুর মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে হতে বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়ার পরও এ ব্যাপারে নাগরিকদের অবগত না করাটা সরকারের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আন্তরিকতা আছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে সরকারকে ঢাকা শহরের বায়ু সম্পর্কে যথাযথ তথ্য যথাসময়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না, যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম, যুব বাপার সদস্যসচিব রাওমান স্মিতা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত