Ajker Patrika

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে চাঁদা তোলেন ‘মুরগি রিপন’

শরীফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২১, ১৩: ৫০
Thumbnail image

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে মুরগি রিপনের চাঁদাবাজি থামছেই না। ছয় মাস থেকে এক বছর পরপর উচ্ছেদ হয় তাঁর দখলে থাকা শিমরাইল মোড়ের রিকশার লেনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া সরকারি জায়গা। উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পরই আবার তা বেদখল হয়ে পড়ে। তবে সবকিছুই হয় দিনের আলোয়, প্রকাশ্যে। প্রতিদিন নির্ধারিত অঙ্কের টাকা চাঁদা দিলে দখল করা এই জায়গায় ব্যবসার জন্য অনুমতি মেলে। এর আগে দিতে হয় মোটা অঙ্কের অগ্রিমও; যা চুক্তি শেষে কখনো ফিরে পাওয়া যায়, আবার কখনো সেই টাকা মেরে দেয় মুরগি রিপনের লোকজন।

এই দখলের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত রিকশা ও পথচারীদের সমস্যার সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্টদের সেদিকে তাকানোর সময় নেই। জানা গেছে, যানজট নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড থেকে ডাচ–বাংলা ইউটার্ন পর্যন্ত রিকশা চলাচলের জন্য লেন তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই এটি দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা। এই রিকশার লেন দখল করে হকারদের কাছে মোটা অঙ্কের অগ্রিম গ্রহণ করে প্রতিদিনের ভিত্তিতে ভাড়া দেয় তারা। বর্তমানে এই রিকশার লেন থেকে রিপন ওরফে মুরগি রিপন মাসে ১৮ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করেন বলে জানিয়েছেন হকাররা।

গত বছরের ২০ ও ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সওজ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে দোকানগুলো উচ্ছেদ করে। তবে ওই অভিযানে পুলিশ ও সওজের কর্মকর্তারা স্থান ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরই রিপন বাহিনী তা দখলে নেয় হকারদের মাধ্যমে। সেই থেকে অদ্যাবধি জায়গাগুলো বেদখল হয়ে আছে।

উচ্ছেদের সময় সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দখলকারীরা এসব দোকান গড়ে তুলে পরিবহন ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল।

কয়েকজন হকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে রিপন ওরফে ‘মুরগি রিপন’ নামের এক চাঁদাবাজ তাঁর নিয়োজিত লোকদের (জামাল, শাকিল, নাসির ও রুহুল আমিন) দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে চাঁদা উত্তোলন করেন। মুরগি রিপনের সহযোগীরা এসব দোকান থেকে দিনে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকেন। দোকানপ্রতি ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেয় এই চাঁদাবাজ চক্র।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ফুটপাতের এসব দোকান থেকে চাঁদাবাজির সময় মুরগি রিপনের সহযোগী জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গত ৩ মে মুরগি রিপন গ্রেপ্তার হন র‍্যাবের হাতে। গ্রেপ্তারের কয়েক দিন পরই তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় চাঁদাবাজি শুরু করেন।

মুরগি রিপন জানান, রিকশার লেনের ফুটপাত থেকে প্রতিদিন অর্ধলাখের বেশি টাকা আয় হয়। এই চাঁদার একটি অংশ পুলিশ, প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি ও স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে দিয়ে সন্তুষ্ট করেন বলে জানান তিনি। বাকি টাকা এক মার্কেটের মালিক, এক জনপ্রতিনিধি ও তাঁর সহযোগীদের মধ্যে বিলি করার পর অল্প কিছু টাকা নিজের থাকে বলে মন্তব্য তাঁর।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল বলেন, ‘আসলে বারবার আমরা উচ্ছেদ করার পরও প্রভাবশালীরা দখল করে নিচ্ছে। এ জন্য প্রথমত জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা আবারও উচ্ছেদ করব করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমার পর।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে আমরা তাঁদের গ্রেপ্তার করব। কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত