Ajker Patrika

শেষ মুহূর্তে ভূমিহীন সনদ পেলেও পুলিশে চাকরিটা পেলেন না হাসান

অরূপ রায়, সাভার (ঢাকা)
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫০
Thumbnail image

জমি না থাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ পাচ্ছিলেন না বরিশাল জেলার হিজলার আছপিয়া ইসলাম। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে সারা দেশে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। চাকরির পাশাপাশি জমি ও বাড়ি করে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

এবার একই কারণে চাকরি পেয়েও হারালেন সাভারের হাসান সিদ্দিকী। ধর্মান্তরিত হওয়ায় তাঁর বাবা ওমর সিদ্দিকী স্থাবর সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁর নিজের বাড়িও নেই। সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করার পর পরীক্ষার সব ধাপ উতরে গেলেও শেষ মুহূর্তে বাদ পড়লেন হাসান। 

বড় ছেলে হিসেবে ভূমিহীন বাবার পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন হাসান সিদ্দিকী। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না! কনস্টেবল পদে চাকরিতে আবেদনের বয়সও শেষ।

হাসান সিদ্দিকী বলেন, সাভার মডেল কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেছেন তিনি। এ বছর ঢাকা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করে জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় ১১৫ তম হন তিনি। পরে দুই দফায় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও উতরে যান। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ যাচাই (ভেরিফিকেশন) হয়। এতে আটকে যান হাসান সিদ্দিকী। বয়সের কারণে তাঁর পুনরায় আবেদন করারও সুযোগ নেই। 

হাসান সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, পুলিশে চাকরি পেতে নিজেদের জমিসহ ঘর থাকতে হবে। জমিসহ ঘর না থাকলে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দেওয়া ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্র থাকলেই হয়। পুলিশ যাচাইয়ের সময় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসখানেক আগে তাঁকে এসব জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্রের জন্য সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা তাঁকে প্রত্যয়নপত্র দেননি। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার চাকরির জন্য মনোনীতদের ঢাকার পুলিশ লাইনে ডাকা হয়। তাঁকে ডাকা না হলেও অন্যদের সঙ্গে তিনি পুলিশ লাইনে গিয়ে জানতে পারেন জমিসহ ঘর না থাকায় পুলিশ যাচাইয়ে (ভেরিফিকেশন) তাঁর চাকরি আটকে গেছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলামের হস্তক্ষেপে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ভূমিহীন হিসেবে প্রত্যয়নপত্র পান। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা আগেই নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়। 

হাসান সিদ্দিকীর বাবা ওমর সিদ্দিকীর জন্ম সাভার পৌর এলাকার আড়াপাড়ায় একটি হিন্দু পরিবারে। ২০০২ সালে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন হাসান ছিলেন এক বছরের শিশু। ধর্মান্তরিত হওয়ায় তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বঞ্চিত করা হয় বাবার স্থাবর সম্পত্তির অধিকার থেকে। এর পর থেকে ওমর সিদ্দিকী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সাভার পৌর এলাকার বিনোদবাইদ মহল্লায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। 

ওমর সিদ্দিকী বলেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানের ব্যক্তিগত চিত্রগ্রাহক। যে বেতন পান তাতে চার সদস্যের পরিবারকে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। এর মধ্যেও তাঁর দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় ছেলে হাসান সিদ্দিকী ধামরাই সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে এবার অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছে। 

ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘পরিবারের অভাব ঘোচাতেই তাঁর ছেলে চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। চাকরির পাশাপাশি  তাঁর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ারও ইচ্ছা ছিল।’ 

এ ব্যাপারে ইউএনও মাজহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্র যে কোনো জনপ্রতিনিধির দেওয়ার কথা। এর জন্য সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে আসার কথা নয়। তাছাড়া আইন অনুযায়ী তিনি প্রত্যয়নপত্র দিতে পারেনও না। যদি কোনো কর্তৃপক্ষ কারও বিষয়ে লিখিতভাবে জানতে চায় যে, তাঁর কোনো খতিয়ান বা জমি আছে কি-না, তাহলে আমরা কর্তৃপক্ষকে সেটি জানাব। এরপরও মানবিক বিবেচনায় সহকারী কমিশনারকে আমি বলেছিলাম। তিনি তখন সরকারি কাজে ঢাকায় ছিলেন। ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা বেজে গেছে। পরে সনদ দিয়েছেন।’ 

আর আবেদনকারী কেউ ভূমিহীন হলে চাকরির জন্য সহকারী কমিশনারের (ভূমি) প্রত্যয়নপত্র লাগবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছিল কিনা তা দেখা দরকার বলেও উল্লেখ করেন ইউএনও। 

হাসানের চাকরি পাওয়ার আর কোনো সুযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘ঢাকা জেলা থেকে পুলিশের কনস্টেবল পদে মনোনীত সবাইকে প্রশিক্ষণের জন্য গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সারদা পুলিশ একাডেমিতে পাঠানো হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক ভূমিহীনের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে যোগাযোগ করা হলে হাসান সিদ্দিকীকেও প্রশিক্ষণে পাঠানো সম্ভব হতো। এখন আর তাঁকে প্রশিক্ষণে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই।’ 

তবে তিনি আশা দিয়েছেন এসপি মারুফ হোসেন। তিনি বলেছেন, তাঁর মাধ্যমে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর যদি হাসান একটি চিঠি লেখেন তাহলে হয়তো আইজিপি বিবেচনা করতে পারেন। 

এর আগে একইভাবে পুলিশ কনস্টেবল পদে সব ধাপে কৃতকার্য হয়েও জমি না থাকায় বরিশালের আছপিয়া ইসলাম, বরগুনার সজল ও খুলনার মিমকে প্রশিক্ষণে ডাকা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। পরবর্তীতে তাঁদের প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত