Ajker Patrika

মাওনা-কালিয়াকৈর

দিনে সড়ক দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাতের ভয়

  • সড়কের দুই পাশে বিস্তৃত ঘন শালবন, রয়েছে অসংখ্য বাঁক
  • যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময়েই ঘটছে প্রাণহানি
  • রাতে গাছ ফেলে ডাকাতি শেষে বনে লুকিয়ে পড়ছে ডাকাত দল
রাতুল মণ্ডল, (শ্রীপুর) গাজীপুর
মাওনা- কালিয়াকৈর সড়ক। ছবি: সংগৃহীত
মাওনা- কালিয়াকৈর সড়ক। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে বিস্তৃত ঘন শালবন। সড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য বাঁক। এসব বাঁক অতিক্রম করতে গিয়ে প্রায় দিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। দিনের বেলায় যানবাহন চলাচল বেশি থাকায় এ সময় দুর্ঘটনাও বেশি ঘটছে। আর রাত নামলে শালবনবেষ্টিত সড়কটিতে ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।

মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কাওরান বাজার থেকে হাসিখালী ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার অংশ। যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বলছেন, সড়কটিতে দিনে দুর্ঘটনার ভয়, আর রাত হলেই ডাকাতের আতঙ্ক। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও ডাকাত-আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয় এই সড়কের যাত্রী ও চালকদের।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলায় বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হাজারো কর্মকর্তা, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। যানবাহনে করে পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহের জন্যও সড়কটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া দুই উপজেলার মানুষেরও যাতায়াতের পথ এটি।

স্থানীয় বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া-মাওনা আঞ্চলিক সড়কের বড়চালা এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশার চালক ও একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হন।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কাওরান বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মো. রাশেদ ও আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। গত ১৪ জুন বাদনীভাঙ্গা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারুন অর রশিদ ও জাকির হোসেন নামের আরও দুই ব্যবসায়ী প্রাণ হারান। এ ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেশ কয়েকজন আরোহী নিহত ও আহত হয়েছেন।

এদিকে মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে রাত নামলেই ডাকাত-আতঙ্ক দেখা দেয়। সর্বশেষ ৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে হাসিখালী ব্রিজের কাছে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। এ সময় অটোরিকশার যাত্রী এক ব্যবসায়ী ব্রিজের কাছে পৌঁছালে জঙ্গল থেকে ১০ থেকে ১২ জন হাতে রামদা নিয়ে সড়কে আসে। হামলার আশঙ্কা দেখে দ্রুত অটোরিকশাটি ঘুরিয়ে রক্ষা পান ওই ব্যবসায়ী অটোরিকশার চালক।

গত বছরের ৪ এপ্রিল সড়কে হাসিখালী ব্রিজ এলাকায় গাছ ফেলে ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ডাকাত দল পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। একই বছরের ১২ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসিখালী ব্রিজ এলাকায় গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন ব্যবসায়ীর টাকাপয়সা লুটপাট করে নেয় ডাকাতেরা। ওই বছরের ৪ আগস্ট বদনীভাঙ্গা মোড়ে গাছ ফেলে ডাকাতি হয়। একই বছরের ১৮ নভেম্বর একযোগে সড়কের তিনটি পয়েন্টে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ৯ জুন রাত ১০টার দিকে উপজেলার হাসিখালী ব্রিজে গাছ ফেলে ডাকাতি করে ১০ থেকে ১৫ জন ডাকাত। তাদের হাতে ছিল ধারালো রামদা।

সড়কটিতে নিয়মিত গাড়ি চালান মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমি এবং বেশ কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ডাকাতদের কবলে পড়ি।’

শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ডাকাতির ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সড়কের কয়েকটি স্থানে স্থায়ী টহলের ব্যবস্থা করা হয়। সব ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টা মামলা আমলে নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে ছক তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পুলিশ ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। আশা করছি, সড়কটি দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচলের জন্য নিরাপদ হবে।’

শ্রীপুরের ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘এই সড়কের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত