Ajker Patrika

দোকান দখলে যুবদল-কৃষক দল নেতা, আ.লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ১৬ মামলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নিজের ভাড়া করা দোকানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্যবসায়ী আমিন বিশ্বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নিজের ভাড়া করা দোকানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্যবসায়ী আমিন বিশ্বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কৃষক দল ও যুবদলের নেতা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর দুটি দোকানঘরে তালা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগ, দোকান দুটি দখলে নেওয়ার জন্য ৫ আগস্টের পর তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হত্যা, বিস্ফোরকসহ মোট ১৬টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাণনাশের হুমকি এবং বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালপত্র লুট করে নেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিন বিশ্বাস দাদপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২৩ বছর সৌদি আরবে থেকে পাঁচ বছর আগে দেশে ফিরে স্থানীয় চিতারবাজারে ভাড়া নেওয়া দোকানে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। এর আগে বিদেশে থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী শামসুল হকের স্বজনদের কাছ থেকে ওই বাজারে জায়গা কিনে দুটি দোকানঘর তুলে ভাড়া দেন।

আমিন হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে ও দোকান দখলের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চিতারবাজারে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন। এ সময় তিনি জানান, বাজারের জায়গায় দোকানঘর তুলে তিনি ভাড়া দেন। সেখান থেকে ছয় বছর ধরে ভাড়া পেয়ে আসছিলেন। ৫ আগস্টের পর শামসুলের নাতি উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক ও দাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সালিমুল হক ভাড়াটিয়াদের তাঁদের কাছে ভাড়া দিতে বলেন। এরপর ১৭ জুন দোকানে তালা দেন দুই ভাই।

আমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এই দুই ভাইয়ের শরিকদের থেকে জায়গা কেনায় আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে আমি বাড়িতে ঘুমাতে পারি না। এই ১০ মাসে আমার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। ওরা কোনো মূল্যেই আমাকে ছাড়তেছে না। এলাকার কেউ মামলার ভয়ে প্রতিবাদও করে না। আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। দুই বছর আগেও আমাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।’

আমিন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ঢাকার বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে চারটি হত্যা ও ছয়টি বিস্ফোরক মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে মামলা দিয়েছে ছয়টি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমার বাড়িতে পুলিশ তদন্তে আসছে। তাদের কাছ থেকেই মামলার বিষয়গুলো জানতে পারি। এসব মামলার কোনো বাদীকেই আমি চিনি না। আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি, এমনকি কখনো কোনো মিটিং-মিছিলেও যাইনি। আমি টুঙ্গিপাড়ায় বিয়ে করেছি বলেই আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে চালায় দিতেছে। ওরা হুমকি দিয়ে বলছে, আমি খুনি হাসিনার লোক, এ দেশে আমার থাকার অধিকার নেই। আমার ঘর দখল করছে, বাড়িও দখল করে নিবে। এই দুই ভাই ঢাকায় বসে বসে আমাকে আসামি করেছে।’

দোকান দখলের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ভাই। ছবি: সংগৃহীত
দোকান দখলের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ভাই। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে কথা হলে চিতারবাজার বণিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই দোকানঘরের জায়গা নিয়ে অনেক আগে থেকে ঝামেলা চলতেছে। সম্প্রতি ওই দুই ভাই ভাড়া দাবি করলে ও উত্তেজনা দেখা দিলে আমার কাছে তিন মাসের ভাড়া রেখে দিই। পরে ওসি স্যারের নির্দেশে আমিন বিশ্বাসকে ভাড়া ও চাবি দিয়ে দিই। এরপরই শুনেছি তালা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের এমপি প্রার্থী খন্দকার নাসিরুল সাহেব (কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি) হস্তক্ষেপ করেন এবং ২৮ মে মীমাংসা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এ জন্য এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

জানতে চাইলে দুই ভাই রেজাউল ও সালিমুল দাবি করেন, নিজেদের ঘরে তাঁরা তালা দিয়েছেন। সালিমুল বলেন, ‘ওই জায়গায় আমাদের ভাগ রয়েছে। আমিন আওয়ামী লীগের লোক এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে দখল করে রেখেছিল। এখন আমরা আমাদের ঘরেই তালা দিয়েছি।’ দুজনের দাবি, ওই দোকান থেকে তাঁরা ভাড়া আদায় করে আসছিলেন। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তিপত্র বা প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তাঁরা জানান, চুক্তিপত্র ছাড়াই ভাড়া দিয়েছিলেন।

দুজনের বিরুদ্ধে দোকানঘর দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনহাজুল রহমান লিপন ও কৃষক দলের সভাপতি লুৎফর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান জানান, দোকানঘরের বিষয়ে আমিন বিশ্বাস অভিযোগ দিয়েছেন। পরে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হবে বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমিনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য কোথাও মামলা হতে পারে। সে বিষয়ে নাম-ঠিকানা জানার জন্য পুলিশ গিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মে ডে’ কল দিয়ে নীরব হয়ে যান আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত ফ্লাইটের পাইলট

বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের পাইলটের করা ‘মে ডে কল’ আসলে কী

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় সবাই মরেনি, একমাত্র জীবিত ১১ নম্বর সিটের যাত্রী

আজীবনের জন্য বহিষ্কার দুপুরে, বিকেলে দলীয় সভায় প্রধান বক্তা!

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এখন বৈঠকে রাজি নন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত