Ajker Patrika

কমিশনে না আড়তদারদের, আমের মণ ৫০ কেজিতে

  • বুধবার রাজশাহী অঞ্চলে আম কেজি দরে কেনাবেচার সিদ্ধান্ত হয়।
  • দিনব্যাপী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মণপ্রতি ৬০ টাকা কমিশন নেওয়ার।
  • সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢলন অনুযায়ী আম বিক্রি হচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ০৮: ৪৮
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর আমের মোকামগুলোতে এখনো ‘ঢলন’ প্রথা বহাল। আড়তদারেরা এখনো ঢলন হিসেবে বাড়তি ওজন নিচ্ছেন চাষিদের কাছ থেকে। তাঁরা ৪০ কেজি বা এক মণ আমের দাম দিয়ে নিচ্ছেন ৪৫ থেকে ৫০ কেজি। অথচ গত বুধবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে দিনভর আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এবার রাজশাহী অঞ্চলে আম কেনাবেচা হবে কেজি দরে। কেউ ঢলন নেবেন না। তবে কেজিপ্রতি দেড় টাকা কমিশন নিতে পারবেন তাঁরা। তবে পরদিনই সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

গত বুধবার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার চাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ঢলন প্রথা বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি দেড় টাকা বা এক মণ আমে ৬০ টাকা কমিশন নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরদিন বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বরে গিয়ে দেখা গেল, সবই চলছে আগের মতো। এখনো ঢলন অনুযায়ী আম বিক্রি হচ্ছে।

বানেশ্বর কাচারি মাঠের সামনে কথা হয় স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ী মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ ৪০ মণ আম বিক্রি করলাম। কিন্তু প্রতি মণে ৪৫ কেজি গুনতে হলো। কেজি দরের নিয়ম কেউ মানছে না।’ পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেক চাষি আজমল হক বলেন, ‘আগের সিস্টেমেই সব চলছে। কেউ ৪৮ কেজি মণ ধরছে, কেউ ৫২ কেজি। কে কী মানবে, সেটা একেকজনের মতো। কেউ কেজি ধরে নিচ্ছে না।’

বানেশ্বরের ‘নাসিম ফল ভান্ডার’ নামে এক আড়তে গিয়ে মালিককে না পেয়ে কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। কেজি দরে বিক্রির প্রসঙ্গ তুলতেই একজন বলেন, ‘এই নিয়ম আমরা মানি না।’

গত বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী। তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কেজি দরে আম বিক্রির। ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়েছে। এমনকি বাজারে মাইকিংও করা হয়েছে নিয়ম মানার জন্য।

তারপরও কেউ মানছেন না। এ অবস্থায় চাপ দিলে উল্টো তাঁরা আম কেনা বন্ধ করে দিতে পারেন। তাহলে তো চাষিদেরই সর্বনাশ।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী শহিদ মিয়া দেশের সবচেয়ে বড় আমের মোকাম কানসাটে ব্যবসা করেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘একদম গোঁজামিল হয়ে গেছে। কেউ কোনো নিয়ম মানছে না। যে যার মতো চালাচ্ছে।’

রাজশাহী অঞ্চলে এক মণ আম মানে বহুদিন ধরে কেউ ৪২ কেজি ধরতেন, কেউ ৫২। কিন্তু দাম ঠিকই দেওয়া হতো ৪০ কেজির হিসাবে। বারবার এই অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কার্যকর ফল মেলেনি। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় কেজি দরে বেচাকেনার ব্যাপারে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠিও পাঠানো হয় নির্দেশনার জন্য। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না আসায় ৪ জুন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ফের বসেন চাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। তাঁরা চান, রাজশাহী বিভাগের সব জেলায় যেন একই নিয়মে আম কেনাবেচা হয়। পরদিন বিভাগের চার জেলার (রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ) হাট ইজারাদার, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও চাষিদের নিয়ে আবারও বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, কেজি দরে আম বেচাকেনা হবে এবং কোনো পর্যায়ে কমিশন দেওয়া যাবে না। তবে সেই ঘোষণার রেশ থাকতেই বাজারে আরও জটিলতা তৈরি হয়। অনেক আড়তদারই কেজিপ্রতি ৩ টাকা কমিশন দাবি করতে থাকেন। কিছু জায়গায় এই হার মেনে নিতেও বাধ্য হন চাষিরা।

এই অবস্থার নিরসনে গত বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনার ফের বসেন বানেশ্বর, কানসাট, ভোলাহাট, রহনপুর ও সাপাহারের আম মোকামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। কিন্তু এত দীর্ঘ আলোচনা শেষে গৃহীত সিদ্ধান্তও মাঠে নামতেই ভেস্তে গেল।

বানেশ্বর আমের হাটের ব্যাপারে বুধবার পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নূর হোসেন নির্ঝর বলেছিলেন, সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা তাঁরা বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারও একই নিয়মে আম কেনাবেচার বিষয়ে কথা বলতে তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গেও মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরও ফোনে সাড়া পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত, পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ড্রোন ভূপাতিত করল ইরান

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে যে কথা হলো

ড. ইউনূস ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম কে

ইরানে ইসলামি শাসনের অবসান হতে পারে—মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত