Ajker Patrika

পাঠদান বন্ধ রেখে আ.লীগ নেতাদের শুভেচ্ছা: ‘মহৎ’ কাজ বললেন উপাধ্যক্ষ

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ মে ২০২২, ২০: ৫৮
Thumbnail image

পাঠদান বন্ধ রেখে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘মহৎ কাজ’ হিসেবে সম্বোধন করলেন ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ। আজ শনিবার ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

কলেজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে আজ সকাল ৯টায় ভাড়া করা বড় আকারের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে কলেজের ১০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী রওনা হন জেলা সদরের উদ্দেশে। বেলা ১টার পর তাঁরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শনিবার কলেজের অধিকাংশ শ্রেণির পাঠদান হয়নি। এ ছাড়া অধ্যক্ষ না থাকায় স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ফরম পূরণ করতে এসে ফিরে গেছেন অনেক শিক্ষার্থী।

অধ্যক্ষ ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে কলেজের পক্ষ থেকে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক সজল কান্তি বিশ্বাস, পরিসংখ্যানের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার রায়, ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কবীর, আইসিটি, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক যথাক্রমে মো. রবিউল ইসলাম, মো. জাহিদুল হক পল্লব, সাইফুল্লাহ নজীর মামুন, শরীরচর্চা শিক্ষক আব্দুর রউফ খান, শাখা কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম, অফিস সহকারী মো. হাবিবুর রহমানসহ প্রমুখ গিয়েছিলেন।

কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, আজ তাদের অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, আইসিটি বিষয়ের ক্লাস হয়নি। স্বাভাবিক পাঠদান ছাড়াও ফরম পূরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা।

অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সজল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বাসা ফরিদপুর শহরে। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কলেজের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর একটি কর্মসূচির জন্য অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে আমি কলেজে না গিয়ে শহরে অবস্থান করেছি। পরে কর্মসূচি শেষ করে আর কলেজে ফেরা হয়নি।’

আইসিটি বিভাগের প্রভাষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি কলেজে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ স্যারের সাথে জেলা সদরের ওই  কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে যাই। এ জন্য কলেজে আজকের নির্ধারিত ক্লাসে পাঠদান করতে পারিনি।’

এ প্রসঙ্গে কলেজের উপাধ্যক্ষ খন্দকার আবু মোরছালিন বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষই সবকিছু। ওই শিক্ষকেরা যেহেতু অধ্যক্ষের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন এ জন্য তাঁরা হয়তো কলেজ থেকে ছুটি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি। তাঁরা একটি মহৎ কাজে গিয়েছিলেন, আর তাঁরা তো অধ্যক্ষের সাথেই ছিলেন।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আবু মোরছালিন আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা অনুপস্থিত থাকায় কলেজের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা তো কলেজের পক্ষে সেখানে উপস্থিত থেকে কলেজের কাজই করেছেন। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ফরম পূরণের নির্ধারিত ফরমে আমার স্বাক্ষর করার এখতিয়ার ছিল না, আবার অধ্যক্ষ স্যারও কলেজে ছিলেন না। তাই স্নাতক সম্মান শ্রেণির কোনো কোনো শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে এসে ফিরে গেছেন।’

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। একপর্যায়ে তিনি ফোন কল কেটে দিয়ে তা (ফোন) বন্ধ করে রাখেন। ফলে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

কলেজের শাখা কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির (বাকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ। তাই আমরা স্যারের নেতৃত্বে বাকশিসের পক্ষ থেকে বেলা সাড়ে ১০টায় জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফকে ও আধা ঘণ্টার ব্যবধানে নতুন সভাপতি শামিম হককে জেলা সদরের পৃথক স্থানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, মো. কামরুল ইসলাম গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার গুনবহা ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে হেরে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত