Ajker Patrika

তত্ত্বাবধায়কের দুর্নীতিতে সরকারের গচ্চা ১৪ লাখ

  • প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ও শর্ত লঙ্ঘন করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে ওষুধ ক্রয়।
  • নিয়ম অনুসরণ না করেই ব্যয়।
  • স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনেমিলেছে সত্যতা।
সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি  
মঞ্জুরুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
মঞ্জুরুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে ওঠা বেশ কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালনকালে হাসপাতালটিতে বেশ কিছু অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে রাষ্ট্রের ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হালিমা খাতুন স্বাক্ষরিত দুটি অডিট আপত্তির প্রতিবেদনসহ একটি পত্র ২৫০ শয্যা মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়কের কাছে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ওই তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে অডিট আপত্তির জবাব স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরে প্রেরণের জন্য বলা হয়। তবে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো জবাব দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। অডিট রিপোর্ট আসা একটি রুটিন ওয়ার্ক। ওই সময়ে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাসময়ে জবাব দিয়ে দেওয়া হবে।’ তবে সে সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জেলার বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যেসব অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে সেগুলো কেনাকাটায় তাঁর অনাপত্তি ও অনুমতি রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘অডিট একটা স্বাভাবিক বিষয়, অফিশিয়াল বিষয়। এটা আবার ফয়সালাও হয়। আর ওই সময় যেহেতু আমি দায়িত্বে ছিলাম, তাই জবাব দিয়ে দিয়েছি।’

অডিট প্রতিবেদনে যা আছে

স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের পৃথক দুটি প্রতিবেদন বলা হয়, প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার্জিক্যাল ওষুধ কেনা ও দরপত্র অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে ওষুধ কেনায় রাষ্ট্রের ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৩ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তার মধ্যে ‘দরপত্র অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে ইডিসিএলের (সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানি) পরিবর্তে বেসরকারি সরবরাহকারীর কাছ থেকে ওষুধ কেনার ফলে সরকারের ৬ লাখ ১০ হাজার ৩৪৩ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে’ শিরোনামে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়—মুন্সিগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, সুপারিনটেনডেন্টের কার্যালয়ে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে চতুর্থ এইচপিএনএসপি-এর অধীনে লাইন ডিরেক্টর, হাসপাতাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট মহাখালী, ঢাকা কর্তৃক ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রদত্ত বাজেটে, টেন্ডার অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে ইডিসিএল-এর পরিবর্তে সরবরাহকারীর কাছ থেকে ওষুধ কেনার কারণে সরকারের ৬ লাখ ১০ হাজার ৩৪৩ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

এ ছাড়া ‘প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে এমএসআর সার্জিক্যাল সরঞ্জাম এবং রাসায়নিক রি-এজেন্ট সামগ্রী কেনায় সরকারের ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে’ শিরোনামে দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের এমএসআর সার্জিক্যাল সরঞ্জাম এবং রাসায়নিক রি-এজেন্ট সামগ্রী বেশি দামে মেসার্স সিনাপস ইন্টারন্যাশনাল নামক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেনা হয়েছে। ইন্টারনেট/স্থানীয় বাজার থেকে একই ধরনের এমএসআর কেমিক্যাল রি-এজেন্ট পণ্য সংগ্রহ করে অডিটকারীরা দেখেছে যে প্রদত্ত ইউনিটমূল্য প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া আরও অনিয়ম করে নির্ধারিত বাজারমূল্যের সঙ্গে ৩০% ভ্যাট, আইটি, লভ্যাংশ এবং পরিবহন খরচ যোগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিধি অনুযায়ী, টেন্ডার দেওয়ার আগে বর্তমান বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করেনি তারা। স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফারহানা বিনতে মোশারফ স্বাক্ষরিত ওই অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লিখিত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত