Ajker Patrika

চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসে কীভাবে মারা গেলেন নজরুল  

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ২১: ১৩
চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসে কীভাবে মারা গেলেন নজরুল  

চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় এসে মারা গেছেন চট্টগ্রামের পটিয়া সেন্ট্রাল কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম আকাশ (৩৫)। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নিহতের ভাগনে সোহেল রানা জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদে বাস চাপায় মারা যান নজরুল। তাঁকে বহনকারী বাসটির কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাস স্ট্যান্ডে বাস পৌঁছানোর পর দেখা যায় নজরুল অসুস্থ। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি সেখানেই মারা যান। তবে পুলিশের বক্তব্য আলাদা।  

শুক্রবার ভোরে নজরুল ইসলাম সিডিএম ট্রাভেলসের একটি বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নিহতের ভাগনে সোহেল রানা জানিয়েছেন, তাঁর মামা পটিয়া থেকে অন্য একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে ঢাকা যাচ্ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্টেশন এলাকায় পৌঁছে বাস থেকে নামেন। এ সময় পেছন থেকে আরেকটি বাস এসে তাঁকে চাপা দেয়। পরে পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। 

এ ঘটনায় সিডিএম ট্রাভেলসের বাসমালিক পরিচয় দিয়ে মো. জামাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে বাস এসে পৌঁছালে দেখা যায় সেখানে একজন আহত ব্যক্তি ছিল। এ সময় সিডিএম পরিবহন মালিক সমিতির লোকজনসহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপস্থিত হন। আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।’ তবে জামাল নিজেকে একবার লাইনম্যান, একবার বাস মালিক পরিচয় দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

নিহত নজরুলের ভাগনে এবং বাসমালিক পরিচয় দেওয়া জামালের বক্তব্যের বাইরেও সায়েদাবাদ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. আব্বাস সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয় জানান। তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনাটি সায়েদাবাদে ঘটেনি। এটি ঘটেছে কুমিল্লার গৌরীপুরে। সেখান থেকে একই বাসে করে ঢাকা নিয়ে আসলে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডেই তাঁর মৃত্যু হয়। আমরা সেখানে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি।’ 

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নজরুল ইসলামের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন পরিবহন মালিক সমিতির লোকজন। তাঁদের লাঞ্ছনার পাশাপাশি এ বিষয়ে থানায় না জানানোর জন্যও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নিহত আকাশের পরিবারকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তড়িঘড়ি করে মরদেহ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিহতের বন্ধুদের অভিযোগ, দুর্ঘটনাস্থল নিয়েও তথ্য গোপনের আশ্রয় নিয়েছেন মালিক সমিতির লোকজন। 

নজরুল ইসলাম আকাশ বাসে আহত অবস্থায় কোথা থেকে এসেছে এবং তাঁকে সায়েদাবাদ থেকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে নিজেকে লাইনম্যান পরিচয় দেওয়া জামাল ক্ষিপ্ত হন এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানির হুমকি দেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেকে বাসমালিক বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। অনেকগুলো বাসের নানা বিষয় আমাকে দেখতে হয়। একজন মারা যেতেই পারেন, এটা ছোটখাটো বিষয়। আর কখন কোথায় কী হয়েছে তা ফাঁড়ির ইনচার্জ জানে, তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’  

সায়েদাবাদ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আব্বাস বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে নিহতের স্ত্রী আসেন। তিনি মামলা বা আইনি জটিলতা ছাড়াই মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। নিজের স্ত্রী মামলা করতে না চাইলে তো আমি মামলা করাতে পারব না।’ 

নিহত নজরুল ইসলাম আকাশ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ছোট ধনতোলা গ্রামের সুরত জামানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত