Ajker Patrika

ঘিওরে চলছে রমরমা মাটির ব্যবসা, কমে যাচ্ছে ফসলি জমি

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯: ৩৮
ঘিওরে চলছে রমরমা মাটির ব্যবসা, কমে যাচ্ছে ফসলি জমি

মানিকগঞ্জের ঘিওরে আবাদি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। প্রভাবশালী ভূমিখেকোরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছে এই মাটির ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিকেরা মাটি বিক্রি করতে না চাইলেও তাঁদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে।

এদিকে এসব মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী ও স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। তাই কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

অবাধে মাটি কাটার ফলে একদিকে যেমন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি, অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়ছে ব্রিজ, রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। ফসলি জমিতে এক্সকাভেটর (ভেকু) বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এসব মাটি ড্রাম ট্রাক ও সড়কে নিষিদ্ধ লরি দিয়ে (কাঁকড়া ট্রাক) নেওয়ার ফলে গ্রামীণ পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিন উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের নারচী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটির ব্যবসায়ীরা ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। এসব মাটি পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন নির্মাণাধীন বাড়ি, পুকুর ভরাটের কাজে ও ইটভাটায়। এ ছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ড্রাম ট্রাক চলার কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ছানোয়ার হোসেন পয়লা ঘিওর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি কৃষি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কাটছেন। অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। সেই রাস্তা করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। এ নিয়ে বাধা দিলে নানা রকম হুমকি-ধমকি ও হয়রানির করা হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। 

মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকেরানারচী গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ ও করিম মিয়া বলেন, ‘পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এই মাটি নেওয়ার জন্য আমাদের ফসলি জমি নষ্ট করেই নেওয়া হচ্ছে ভেকু ও ড্রাম ট্রাক। বাধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন—ফসল তো নষ্ট হয়েছে। এখন জমির মাটি বিক্রি করে দেন।

গোবর নারচী গ্রামের কৃষক মো. সানোয়ার বলেন, ‘আমার বাড়ির পেছনে সরকারি রাস্তা। জমির শস্য আনার অনুপযোগী এই রাস্তায় স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় মেরামত করা হয়েছে। মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য নিষেধ করতে বলায় আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায় এবং জোর করেই রাস্তা নষ্ট করে ট্রাক চলাচল করাচ্ছেন। আমরা তো খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, তাই কিছু বলতেও পারি না।’ 

জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাটির টপসয়েল কেটে নেওয়ার ফলে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে নালা অথবা জলকড়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। নির্বিচারে গ্রামের কৃষকদের লোভের ফাঁদে ফেলে যেভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ফসলি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কমে যাবে ফসল উৎপাদন।’ 

ঘিওর সদর ইউনিয়নের ঠাকুরকান্দি গ্রামের মাটির ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি কবরস্থানে মাটি দিচ্ছি। এক ফসলি জমি কিনে মাটি কাটছি। তিন ফসলি জমি কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমি কিনি না। আমি জোর করে কারও জমিতে মাটি কাটি না। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কীভাবে ম্যানেজ করে মাটি কাটতে হয়, তা আপনারা জানেন। আমি এ পর্যন্ত অনেক সাংবাদিককে ম্যানেজ করেছি।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান বলেন, ‘জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এ ছাড়া ওই ছোট সড়ক দিয়ে ড্রাম ট্রাক চলার নিষেধও রয়েছে। ইতিপূর্বে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা এবং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত