Ajker Patrika

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দুর্বৃত্ত-লুটেরাদের দায়মুক্তির আইন: আনু মুহাম্মদ 

ঢাবি প্রতিনিধি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দুর্বৃত্ত-লুটেরাদের দায়মুক্তির আইন: আনু মুহাম্মদ 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের দুর্বৃত্ত ও লুটেরা গোষ্ঠীর দায়মুক্তির আইন—বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘আমাগো মাছ মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’—শিরোনামে ছাত্র জনতার সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

এ সময় আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূলত মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তাহীনতার আইন। দেশের লুণ্ঠনকারী, দখলদার আর সম্পদ পাচারকারীদের নিরাপত্তার আইন। নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন ধারা আছে, যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, এমপিদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, বিদেশি রাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের ওপর ভয়ংকর আগ্রাসনও চালায় কিংবা ক্ষতিকর বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তার বিরুদ্ধেও কথা বলা যাবে না। 

সুতরাং নিরাপত্তা দিচ্ছে তাদের যারা বাংলাদেশের জনগণের শত্রুপক্ষ। এটা বাংলাদেশের দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী ও লুটেরা গোষ্ঠীর দায়মুক্তির আইন। এমন দায়মুক্তির আইন আরও আছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, সুন্দরবনসহ প্রাণ বিনাশী একের পর এক প্রকল্প হচ্ছে, ঋণনির্ভর প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলা হচ্ছে—সেগুলো করা হচ্ছে একটি দায়মুক্তির আইন দিয়ে।’ 

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যদি কোনো বিপর্যয় হয় তাহলে দেশের কোটি কোটি মানুষ ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়বে। কিন্তু এর জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত রাশিয়ান কর্মকর্তা, ভারতীয় কর্মকর্তা কিংবা বাংলাদেশি কর্মকর্তার দায়ী হবে না। সেই দায়মুক্তির আইন সংসদে পাশ করা আছে। কেন তারা এগুলো করছে? কারণ, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারা অনির্বাচিত। ২০০৮ সালের পরে নির্বাচনের মতো কোনো নির্বাচন হয়নি, তাহলে বর্তমানে যারা আছে তারা কীভাবে আছে! তারা জবরদখল ও পেশিশক্তির জোরে ক্ষমতায় আছেন।’ 

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান, সাংবাদিক আবু সাইদ খান, গবেষক মাহা মির্জা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীম আরাফাত, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সংগঠক ডা. হারুনুর রশিদ প্রমুখ। 

অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান বলেন, ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশের আড়ালে আওয়ামী লীগ কতটা আনস্মার্ট সেটা আমরা জেসমিন সুলতানার মৃত্যুতে দেখলাম, লেখক মুশতাক হত্যার মধ্যে দেখলাম, মাইকেল চাকমার মতো অনেকের গুম হয়ে যাওয়ার মধ্যে দেখলাম। স্মার্ট হওয়ার নামে তারা পেছনের দিকেই যাচ্ছেন। একটি পত্রিকার নিবন্ধন বাতিলের জন্য আমাদের নায়ক-নায়িকা, তীর্থের কাকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাকিয়ে থাকেন পদের দিকে, নির্বাচনের মনোনয়নের দিকে।

দু শ বছর পেছনে যদি যাই, ১৮২৩ সালে পত্রিকাগুলোকে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার কারণে সেই সময় রামমোহন রায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুর একটি রিট পিটিশন করেছিলেন। রিট বাতিলের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল ‘ভারত কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়’। আমরা ব্রিটিশদের পরাধীন ছিলাম, পাকিস্তানেও পরাধীন ছিলাম, বর্তমানে এই সরকারের পরাধীনতায় রয়েছি।’ 

অধ্যাপক তানজীম আরও বলেন, ‘আজকে যারা একটি পত্রিকার টুঁটি চেপে ধরতে চাইছেন, নিবন্ধন বাতিল করতে চাইছেন, তারা বোধ হয় পরাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক! কিংবা পরাধীন রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর তাঁবেদার। কত স্মার্টলি আমরা দু শ বছর পেছনে চলে গেলাম, কেতাদুরস্ত নায়ক-নায়িকারও পথে দাঁড়িয়েছেন পেছনে যাওয়ার জন্য। ঠিক একইভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কথা বলছি। নাম ডিজিটাল কিন্তু এটাও এক ধরনের পশ্চাৎপদতা। এই ডিজিটালের আড়ালে রয়েছে আরেক পশ্চাৎগামী আইন, অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট—যেটা হয়েছে ১৯২৩ সালে! এক শ বছর পরেও আমরা পরাধীন রয়ে গেলাম, পশ্চাৎপদ রয়ে গেলাম।’ 

ছাত্র জনতার সমাবেশ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা-গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত