Ajker Patrika

বিচার বিভাগীয় সংস্কারে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
ব্লাস্ট আয়োজিত ‘বিচার বিভাগীয় ও পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবিত সুপারিশমালা’ শীর্ষক আলোচনা। ছবি: সংগৃহীত

বিচার বিভাগীয় সংস্কারে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অপরিহার্য। কার্যকর এডিআর ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও মামলা জট কমানো সম্ভব। ব্লাস্ট আয়োজিত ‘বিচার বিভাগীয় ও পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবিত সুপারিশমালা’ শীর্ষক আলোচনায় এ সব কথা উঠে আসে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বলেন, আদালতের বিভিন্ন কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালনা করে কীভাবে সময় ও সম্পদ বাঁচানো যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আসামিদের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস করার জন্য হাজিরার জন্য আলাদা করে আদালত কক্ষ তৈরি করা যেতে পারে। মামলার দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস করার জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিশেষ আদালত তৈরি করা যেতে পারে। আইনজীবীদের নিয়মিত নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন, যাতে আইনগুলো সচল হয় এবং আইনজীবীদের মাধ্যমেও বিচারকেরা নতুন আইন সম্পর্কে জানতে পারে।

এ ছাড়াও তিনি বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও যোগ্যতা নির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে কীভাবে কার্যকরী করা যায়, সে দিকেও নজর দিতে হবে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন সত্তা থাকা জরুরি, যারা আবেদনকারীর যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ দেবেন। সেই সঙ্গে বিচারকদের নিয়মিত কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করাও প্রয়োজন যাতে করে তা মামলা দায়েরকারীদের কোনোভাবে প্রভাবিত করতে না পারে। পাশাপাশি বিচারকের কর্মদক্ষতা হ্রাসে পেলে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের বিচারককে বরখাস্ত করারও অধিকার থাকতে হবে।

বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে যাতে তারা কোনো ক্ষমতাশালী দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে, সে জন্য আমাদের পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন করা জরুরি। স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, একজন আসামি হিসেবে শাস্তি ভোগ করে জেল থেকে বের হওয়ার পরে তার পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এবং তাঁর চারিত্রিক পরিবর্তন যে হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো ধরনের সনদ প্রদান করা হয় না।

আলোচ্য বিষয়ে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড উইম্যান এমপাওয়ামেন্টের আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার এবং ব্লাস্টের গবেষণা কর্মকর্তা ফাহাদ বিন সিদ্দিকি। বিচার বিভাগীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনায় বিচারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, ভুক্তভোগীও সাক্ষী, আইনজীবী ও বিচারকদের সুরক্ষার অভাব, শিশু আদালতে মামলা প্রেরণে অনিয়ম, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবন্ধকতার ওপর আলোকপাত করা হয়। এ ছাড়া আদালতের কার্যক্রম সম্প্রচার, আদালতের কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার, ডিজিটালাইজেশন, নোটিশ ও সমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রেরণ, ভার্চুয়াল শুনানি: ২০২০-এর আইটি আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়।

ভুক্তভোগীদের সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস: এক স্থানে মামলা দায়ের, সেবা গ্রহণ, ও আইনি প্রতিকার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার উদ্যোগসহ নানান ধরনের সংস্কার সুপারিশের কথা উঠে আসে।

পুলিশ সংস্কারের জন্য জাতিসংঘ নির্যাতন বিরোধী সনদ ও এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল এবং ইস্তাম্বুল প্রটোকলসহ গুরুত্বপূর্ণ সনদের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ৫৪ ও ১৬৭ ধারাসহ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন, পুলিশ প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (আদিবাসী, দলিত, লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠী) প্রথা এবং সাংস্কৃতিক নিয়মাবলি সম্পর্কে সচেতনতামূলক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, কোনো শিশুকে হেফাজতে নেওয়ার সময় বা তাকে নিয়ে পরিবহন করার সময় আলাদা স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা এবং লিঙ্গভিত্তিক ও পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে, অভিযোগকারী যাতে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে পারে তার জন্য একটি নির্ধারিত ওয়েব পোর্টাল চালু করা সহ আরও বেশ কয়েকটি সুপারিশ উপস্থাপনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত