Ajker Patrika

নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হতো সিঁড়ি

মারুফ কিবরিয়া, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে ফিরে
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ১৩: ২৬
Thumbnail image

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস লিমিটেডের প্রতিটি তলা ও সিঁড়ি সব সময়ই তালা দিয়ে রাখা হতো। তৈরি করা জিনিস শ্রমিকেরা বিক্রি করে দেয় এবং বাইরে গিয়ে সময় নষ্ট করে–এই অজুহাতে দিনরাত এসব সিঁড়ি ও তলার দরজাগুলো বন্ধ রাখা হতো। কারখানায় কাজ করা সাবেক ও বর্তমান একাধিক শ্রমিক আজকের পত্রিকাকে এসব কথা জানিয়েছেন।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ১ কোটি ও আহতদের ৩৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও আইন সহায়তাকারী সংগঠন। গতকালও ঘটনাস্থলে স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।

হাশেম ফুডসের যে ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে, তার পাশের ভবনে জুস অপারেটর হিসেবে কাজ করেন মাসুদ আলম। ঘটনার দিন তিনি সেখানেই উপস্থিত ছিলেন। মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কারখানার লেবাররা অনেকে চুরি করত। চুরি করে জিনিসপত্র তারা বাইরে বিক্রি করে দিত। সে কারণে দরজা ও সিঁড়িতে তালা দেওয়া হতো। আগুন লাগার সময় সেই তালা কেউ খোলেনি। তালা খুলে দিলে অনেকে বেঁচে যেত। মাসুদ আরও জানান, হাশেম ফুডসের পেছনের ফটকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন নূর আলম। তিনিও ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সজীব গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নূর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখানে যারা কাজ করত, অনেকে ছোট বয়সের। কম বয়সী হওয়ায় তারা কাজ রেখে ঘোরাঘুরি করে। আড্ডাবাজি করে। একবার বের হলে সহজে আসে না। সে কারণে তাদের তালা দিয়ে আটকে রাখা হতো।

প্রতিষ্ঠানের এই দুই কর্মী ছাড়াও কথা হয় আরও দুই ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁরা থাকেন রূপগঞ্জের দক্ষিণ গোয়ালন্দে। এদের একজনের নাম সবুজ আলম। তিনি পুড়ে যাওয়া ভবনের দোতলায় কাজ করতেন। সবুজ বলেন, এক পাশ সব সময় তালা দিয়ে রাখা হতো।

হাশেম ফুডসের পেছনের সড়কে একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করেন হৃদয়। তিনি বলেন, জিনিস চুরি হওয়ার ভয়ে সব সময় কারখানায় তালা লাগানো থাকত।

পুড়ে যাওয়া ভবনে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা ছিলেন। দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব তদারক করার জন্য সরকারের যেসব সংস্থা আছে, তাদের দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণেই এতগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। জাফরুল্লাহর সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি।

গত দুই দিনের মতো গতকালও হাশেম ফুডসের সামনে কিছুক্ষণ পরপরই নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে এসেছিলেন স্বজনেরা। কেউ ছেলেকে আবার কেউ মেয়েকে। কেউবা তাঁর বোনের সন্ধান করেছেন।  

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকের প্রতিটি পরিবারকে ১ কোটি ও আহতদের ৩৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও আইন সহায়তাকারী সংগঠন এই রিট আবেদন করে। আবেদনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ ও আহত ব্যক্তিদের আপাতত ৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়ারও প্রার্থনা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আগুনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। গত শনিবার রাতে সংগঠনগুলো ই-মেইলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর রিট আবেদনগুলো দাখিল করেছে। আইনজীবী শাহীনুজ্জামান শাহীন রিট আবেদনের কথা নিশ্চিত করেছেন। সংগঠনগুলো হলো আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন আলী রীয়াজ

রাজধানীতে নিখোঁজ কিশোরী নওগাঁয়, যা বললেন সঙ্গে থাকা তরুণের বাবা

নবাবি প্রশাসনে হিন্দু আমলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ

আটক ৩ জনকে ছাড়িয়ে নিতে উত্তরায় থানায় হামলা শিক্ষার্থীদের

উপদেষ্টা রিজওয়ানার কাছে মাত্র ১৫ মিনিট সময় চেয়ে পাইনি: বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত