Ajker Patrika

অভিযোগের শেষ নেই নার্স মোতালেবের বিরুদ্ধে, ভয়ে তটস্থ সহকর্মীরা

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১৮: ১৪
অভিযোগের শেষ নেই নার্স মোতালেবের বিরুদ্ধে, ভয়ে তটস্থ সহকর্মীরা

মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী নার্স মো. মোতালেব মিয়া ও তাঁর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা দিহান আহম্মেদ তন্ময়ের দাপটে অসহায় হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। একজন সহকারী নার্স হয়ে নিজের প্রভাব বিস্তারে নিজের বখাটে ছেলেকে দিয়ে সহকর্মী ও কর্মচারীদের মারপিট, চিকিৎসকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মো. মোতালেব মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি পালনের বদলে নিজের ইচ্ছেমতো নামমাত্র ডিউটি করেন। হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে নিয়মিত মোটা অঙ্কের কমিশন কামিয়ে নিচ্ছেন। ক্ষমতার দাপটে তিনি তাঁর আপনজনসহ পরিচিত রোগীদের হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে জোরপূর্বক দামি ওষুধ সরবরাহ করতে বাধ্য করছেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোতালেব মিয়া মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা হলেও মানিকগঞ্জের একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার নিকটাত্মীয়র পরিচয়ে দিনের পর দিন স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সহকর্মীরা। হাসপাতালের ভেতর মোতালেব মিয়ার অশোভন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে গত নয় মাসে তিন দফায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) বরাবর তাঁকে বদলির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংযুক্ত করে অভিযোগ দিয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত শতাধিক নার্স ও কর্মচারী। 

মোতালেব মিয়া ১৯৯৪ সালের মার্চে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে সহকারী নার্স হিসেবে যোগ দেন। এর পর যে দল ক্ষমতায় এসেছে সে দলের স্থানীয় নেতাদের লেজুড়বৃত্তি করে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে গেছেন। একজন সহকারী নার্স হয়ে মোতালেব মিয়া বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে তাঁর মেয়েকে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে পড়াচ্ছেন। ছেলেকে কিনে দিয়েছেন ৩ লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল, ২০ লাখ টাকার অ্যালিয়ন প্রাইভেটকার। এ ছাড়া নিজের থাকার জন্য বরাদ্দ সরকারি বাসায় লাগিয়েছেন দামি এসি। 

মোতালেব মিয়ার অনিয়ম–স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক, নাস বা কর্মচারী প্রতিবাদ করলে তাঁর ছেলের সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে মারধর করানো হয়। এসব মারপিটের ঘটনায় মোতালেব মিয়া ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। অসদাচরণের অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়। পরে অবশ্য বিভাগীয় মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয় তাঁকে। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব মিয়ার স্বেচ্ছাচারিতার কথা উল্লেখ করে চলতি বছরের জুলাইয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) উপসচিব মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে অভিযুক্ত মোতালেব মিয়ার বিষয়ে বলা হয়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের ভেতর তাঁর ছেলের হাতে ডিউটি পালনকালে সিনিয়র এক নার্সকে মারধর ঘটনায় মোতালেব মিয়াকে অন্যত্র বদলি করা হয়। 

বিভাগীয় কারণ দর্শানো নোটিশতবে মোতালেব মিয়া প্রভাব খাঁটিয়ে সেই বদলি ঠেকিয়ে দেয়। রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি না করে টানা বিকেলে ডিউটি করে যাচ্ছেন। কারণে–অকারণে সকাল ৭টা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালের ভেতর ঘোরাঘুরি করেন। মোতালেব নিয়মিত হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে জোরপূর্বক দামি ওষুধ তুলে নেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ড থেকে গ্রামের অসহায় রোগীদের ফুসলিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা ও অপারেশন করান। মোতালেব মিয়ার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক বা কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে তাঁর ছেলের সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে মারধর করানোসহ অন্যত্র বদলির হুমকিও দিয়ে থাকেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক নার্স আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘হাসপাতালের ভেতর এমন কোনো অনিয়ম–দুর্নীতি নেই যা মোতালেব করেন না। বাবা-ছেলের অত্যাচারে হাসপাতালে কর্মরত সকলে। বছর খানেক আগে হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স মোতালেবের অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তাদের দুজনকেই বদলি করা হয়। পরে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মোতালেব মিয়া নিজ কর্মস্থলে থেকে গেলেও সেই নার্স আর আসতে পারেননি। এ কারণে অনেক নার্স তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পান না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে জানান, একজন নার্স হয়ে তাঁর আয় রোজগারের যে খবর পাই তা সন্দেহজনক। বৈধ চাকরিতে এই আয় হতে পারে না। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগের এক নেতার নাম ভাঙিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি অসদাচরণ করেন। রোগী ভাগিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। আমরা ইজ্জতের ভয়ে তাঁকে কিছু বলতে পারি না। তাঁর বিরুদ্ধে দপ্তর থেকে গোপন তদন্ত হলে সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। 

কারণ দর্শানোর নোটিশের সত্যতা স্বীকার করে মোতালেব মিয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করা করার জন্য কে বা কারা অভিযোগ দিয়েছিল, তিনি সেটির জবাব লিখিতভাবে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানো নোটিশটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। তবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহারের কোনো প্রমাণ আপনার কাছে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। গাড়ি কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ করে গাড়ি কিনেছেন। 

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন মানিকগঞ্জ জেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোতালেব মিয়ার বিরুদ্ধে মৌখিক অনেক অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো হাসপাতাল প্রশাসনের দেখার কথা। আমরা সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ 

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোতালেব মিয়ার বিরুদ্ধে তিন মাস আগে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ এসেছে তা শুনেছি। আমাকে অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু তার জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আমাকে জানানো হয়নি। আর মোতালেব মিয়া অসদাচরণের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত