Ajker Patrika

‘ইসি আইন ভালো হবে, এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘ইসি আইন ভালো হবে, এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে’

নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের খসড়া অনুমোদনের পর সংসদে বিল উত্থাপন হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে প্রস্তুতি। তবে তোড়জোড় করে আইন তৈরি, ইসি গঠন নিয়ে শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া আইনে পুরোনো পদ্ধতি ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটি থাকায় স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনে সবার অংশগ্রহণের দাবিও জানান এই বিশ্লেষকেরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক এর আয়োজনে অনলাইন আলোচনায় এসব কথা তুলে ধরেন তারা।  

‘প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন, জনাকাঙ্ক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য যে আইনটি করতে যাচ্ছে, এটি নিয়ে সংসদে আরও আলোচনার দরকার ছিল। এটা আরও স্বচ্ছ, সুন্দর করা উচিত। 

আইনে যে সার্চ কমিটি আছে, এতে সাবেক সিইসিকে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন শামসুল হুদা। কেননা, পাঁচ বছর কাজ করে সাবেক সিইসির একটি অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। এ ছাড়া মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকসহ আমলাদের রাখার কথাও বলেন তিনি। 

শামসুল হুদা বলেন, একটা আইন হচ্ছে এটা নিয়ে এত অবিশ্বাস থাকলে মুশকিল। আইন হচ্ছে, ভালো হবে, এই বিশ্বাস রাখতে হবে। দেশে কোনো আইন না থাকার পরও অতীতে ভালো কমিশন হয়েছে। আবু সাঈদ, আবু হেনা কমিশন ভালো করেছে। যদিও মাঝে একটু সমস্যা হয়েছে। 

সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো প্রকাশ করার কথা জানিয়ে সাবেক এই সিইসি বলেন, সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো প্রকাশ করা উচিত। এতে মানুষের মতামত পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে সেটি নেই। নাম প্রকাশ করলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাকে বিবেচনার দরকার নেই। 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্চ কমিটি বা ইসি নিয়োগ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে হওয়া উচিত। অন্যথায় যে কমিশন গঠন করা হবে তা হবে বিতর্কিত। ড. শামসুল হুদা কমিশনের পর যে কমিশন গঠন হয়েছে, সবগুলো বিতর্কিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিতর্কিত হবে। 

সাখাওয়াত হোসেন বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানের আইনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রাখা হয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও রাখা হয়েছে। ভারতেও এমন আইন করার আলোচনা চলছে। সার্চ কমিটি যে নামগুলো সুপারিশ করবে তা প্রকাশ করে মতামত নেওয়ার পক্ষে মত দেন ড. সাখাওয়াত হোসেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ইসি গঠনের জন্য প্রস্তাবিত আইনটি সরকারের ইচ্ছাপূরণের আইন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া যেভাবেই ইসি গঠন হোক না কেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কেননা, গত ১৩-১৪ বছরে সব পর্যায়ে যে দলীয় কাঠামো গড়ে তুলেছে এতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনকে আইনি মোড়কে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আলাদা কিছু নেই। এটা কোনোভাবেই অনুসন্ধান নয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যে যোগ্যতা-অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, এমন লোক হাজার হাজার আছে। সব কথার শেষ কথা স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা এবং স্বচ্ছতা। এর কোনো বিকল্প নেই। 

সিপিডির ফেলো ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান বলেন, সবার আলোচনা থেকে বোঝা যায় দুটি বিষয়ে সবাই একমত। কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পলিটিক্যাল কনসেনসাস এবং স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পলিটিক্যাল কনসেনসাস তৈরি করা কিছুটা দুরূহ হলেও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে স্বচ্ছতার দিকটা নিশ্চিত করা সম্ভব। 

সুজনের ছয় সুপারিশ 
আইন পাস হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা এবং বিধি প্রণয়নের সুযোগ এখনো আছে জানিয়ে ছয়টি সুপারিশ দিয়েছে সুজন। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-
১. অনুসন্ধান কমিটিতে সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন করে সংসদ সদস্যকে যুক্ত করা। 
২. নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে অনুমিত সততা, সুনাম, বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি সন্নিবেশ করা। 
৩. নির্বাচন কমিশনে নারী সদস্য রাখা, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য প্রাথমিক বিবেচনায় আসা নামগুলো ওয়েবসাইটে বা গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ, তাদের গণশুনানি ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ ইত্যাদি বিধান যুক্ত করে বিলটি পাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা। 
৪. আইনের প্রায়োগিক দিকটি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে স্পষ্ট করা। 
৫. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিতে জোর দেওয়া। 
৬. ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি পর্যাপ্ত সময় (কমপক্ষে ১-২ মাস) হাতে রেখে শুরু করা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত