Ajker Patrika

উপযুক্ত শব্দ না পাওয়া পর্যন্ত একাত্তরের গণহত্যাকে ‘জেনোসাইড’ বলার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ২২: ০৯
উপযুক্ত শব্দ না পাওয়া পর্যন্ত একাত্তরের গণহত্যাকে ‘জেনোসাইড’ বলার দাবি

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনাকে আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘জেনোসাইড’ নাকি ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করা হবে—তা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। সেমিনারে বেশির ভাগ বক্তাই গণহত্যার পরিবর্তে জেনোসাইড বলার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে ভিন্নমত তুলে ধরেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ। 

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম–মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ‘জেনোসাইড ১৯৭১-এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৃহত্তম গণহত্যার ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতা’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে। 

জেনোসাইড ও গণহত্যা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তা ঠিক নয় বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘জেনোসাইডের সাইড শব্দটা মানেই তো হত্যা। সেখানেও হত্যা আছে। এখানে তো অন্যান্য কথা নিয়ে এসে আমরা নতুন বিতর্ক তৈরি করি। আমার মনে হয়, গণহত্যা ও জেনোসাইড দুটোই বলতে পারি। ব্যবহার করতে পারি। এটা নিয়ে বিতর্ক করা সঠিক নয়। এতে আমরা নতুন জটিলতা সৃষ্টি করছি। এখান থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।’

গণহত্যা ও জেনোসাইড এক বিষয় না উল্লেখ করে মুন্সি ফয়েজ আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে শহীদ সন্তান ও প্রজন্ম ’৭১-এর সভাপতি আসিফ মুনীর। তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস বলা হচ্ছে। জেনোসাইড শুধু গণহত্যা না. গণহত্যার থেকেও বেশি কিছু। যেভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, জাতিগতভাবে নিধন করা হয়েছিল সেগুলো স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আমাদের বড় হাতিয়ার। এসব নিয়ে আমাদের গবেষণার কাজগুলো কম। অনেক কাজ হয়েছে তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডকুমেন্টেশন নেই।’ 

আসিফ মুনীরের পর্যবেক্ষণ ও বক্তব্যে সায় দিয়ে সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, ‘উপযুক্ত শব্দ না পাওয়া পর্যন্ত জেনোসাইড শব্দটি প্রচলিত করতে হবে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘যত দিন আমরা জেনোসাইড শব্দের বাংলা না করতে পারছি, তত দিন আমরা জেনোসাইড বলব। বাংলাদেশে জেনোসাইড রাখঢাক করে ঘটেনি। অজস্র প্রমাণ আছে। এগুলো শুধু আমাদের বাংলা ভাষাতে লিখলে হবে না। আমরা যখন বৈশ্বিকভাবে যাব, তখন অন্য ভাষায় বা ইংরেজিতে নিতে হবে।’ 

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হলে সেখানকার রায়ে যদি গণহত্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে আর দ্বিধা থাকবে না বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী সিকদার। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা উচিত। সেখানে বিচারে যদি প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বে তখন স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।’ 

সাবেক রাষ্ট্রদূত কামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য দেন ফোরামের সহসভাপতি ম. হামিদ। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও আমরা একাত্তরের সভাপতি মাহবুব জামানসহ অনেকেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত