Ajker Patrika

নগর পরিবহন: সেবায় খুশি, চালক ও কাউন্টার মাস্টারদের নিয়ে আছে যাত্রী-ক্ষোভও

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ২২: ২৮
নগর পরিবহন: সেবায় খুশি, চালক ও কাউন্টার মাস্টারদের নিয়ে আছে যাত্রী-ক্ষোভও

গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা দূর করতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে ঢাকার দুই রুটে গতকাল বৃহস্পতিবার নগর পরিবহনের ১০০টি বাস সংযোজন হয়েছে। এই পরিবহনে অন্য বেসরকারি পরিবহনের তুলনায় ভাড়া কম হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে যেমন সন্তুষ্টি আছে, তেমনি বাসের সংখ্যা কম বলে আছে অভিযোগও। আবার এরই মধ্যে মাঝপথে টিকিট ছাড়া যাত্রী তোলা শুরু করেছেন বলে চালকদের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একাধিক কাউন্টারের মাস্টার। আবার তাঁদের বিরুদ্ধেও যাত্রীদের ক্ষোভ আছে। সব মিলিয়ে ব্যবস্থাপনায় কিছু সংকট রয়ে গেলেও যাত্রীদের মধ্যে এই পরিবহন নিয়ে আগ্রহ লক্ষণীয়।

নগর পরিবহনের বাসে নিয়মিত যাতায়াত করেন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত রফিকুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে যাত্রীদের মধ্যে এই পরিবহন নিয়ে তৈরি হওয়া আগ্রহের জায়গাটি বোঝা গেল। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘নগর পরিবহনের জন্য ৫ মিনিট অপেক্ষা করলেও লাভ। কারণ অন্যরা রাস্তায় বসে থাকে, মোড়ে মোড়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এটা জ্যাম না থাকলে এক টানে চলে যায়। ভাড়াও তুলনামূলক কম। তাই এই বাসে যাওয়ার চেষ্টা করি। গাড়ি আরও বাড়ালে যাত্রীদের জন্য খুব ভালো হবে।’

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকা নগর পরিবহন। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত রুটে ৫০টি বাস নিয়ে শুরু হয় এ যাত্রা। প্রথম দিকে সাড়া কম পাওয়া গেলেও এখন চিত্র অনেকটাই পাল্টেছে। এর মধ্যে নতুন করে আরও ১০০ বাস নামানোয় যাত্রীদের আগ্রহ বেশ বেড়েছে। এমনিতে নগর পরিবহনের কাউন্টারে দিনের ব্যস্ত সময়ে যাত্রীদের বেশ ভিড় দেখা যায়।

আজ শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি কাউন্টারেই যাত্রীরা নগর পরিবহনের বাসের অপেক্ষায় রয়েছে। ছুটির দিন ও দুপুর হওয়ায় এ ভিড় যদিও তুলনামূলক কম।

এমনিতে দিনের বিভিন্ন সময়ে যাত্রী সংখ্যায় তারতম্য দেখা যায়। সকালে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। নগর পরিবহনে তখন তিল ঠাঁইয়ের জায়গা থাকে না। টিকিট কেটে বসে থাকলেও বাসে উঠতে পারেন না অনেকে। দেখা যায়, এক-দুটি বাস পরে তারা জায়গা পাচ্ছেন। কিন্তু সারা দিনের চিত্র এমন নয়। বিশেষত দুপুরের দিকে নগর পরিবহনের দ্বিতল বাসগুলো প্রায় ফাঁকাই যেতে দেখা যায়। যদিও এই একই সময়ে অন্য বেসরকারি মালিকানাধীন বাসগুলো যাত্রী-বোঝাই থাকে। এর কারণ হিসেবে কাউন্টারের অবস্থানকে দায়ী করলেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্য বাসগুলোর সিট তেমন ভালো না। এদিকে এই বাসের সিট পরিষ্কার। প্রতিটা সিটে ফ্যান আছে। ছবি: আজকের পত্রিকা বিভিন্ন কাউন্টারের মাস্টার জানান, যেসব জায়গায় কাউন্টারগুলো বসানো হয়েছে, সেগুলো বাস কাউন্টারের জন্য একটু অপ্রচলিত। অধিকাংশ কাউন্টার অন্য বাস থামার জায়গা থেকে একটু দূরে।

কাউন্টারে মাস্টারদের কথার সত্যতা পাওয়া গেল বেশ কয়েকটি কাউন্টারে গিয়ে। কাঁচপুরগামী বাসের শাহবাগের কাউন্টার খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। শাহবাগের কথাই ধরা যাক। ব্যস্ত এই সড়কে চলাচলকারী বেসরকারি বাসগুলো শাহবাগ মোড় থেকেই যাত্রী তোলে। যেগুলোর কাউন্টার আছে, সেগুলো তোলে রমনা পার্কের কোনা থেকে। নগর পরিবহনের কাউন্টারের অবস্থান এই দুইয়ের মাঝামাঝি। ফলে অনেকে দূরে গিয়ে টিকিট কেনার ঝক্কি নিতে চান না অনেকেই। তাই তাঁরা বেসরকারি পরিবহনেই চলাচল করেন। এ ছাড়া পল্টনের কাউন্টারও ভেতরের দিকে। কাউন্টারের অবস্থান জটিলতা যাত্রীদের অনেক সময় সমস্যায় ফেলে দেয়। তবুও অনেকেই নিয়মিত চলাচল করেন নগর পরিবহনে।

ধানমন্ডি-১৫ নম্বরের কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন শফিকুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বাসের সার্ভিস অনেক ভালো। দ্রুত গন্তব্যে যাওয়া যায়। এ ছাড়া অন্য বাস থেকে এই বাসের ভাড়াও কম। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। যেমন বাসের সংখ্যা অনেক কম। সকালে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। মাঝেমধ্যে অনেকক্ষণ পর গাড়ি আসে।’

অবশ্য এরই মধ্যে এই বাসের চালকেরা কিছু অনিয়ম শুরু করেছেন বলেও জানালেন শফিকুল। তিনি বলেন, ‘অনেকে টিকিট ছাড়া ওঠে। আবার ড্রাইভার মাঝে মাঝে রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠায়। এই সমস্যাগুলো ছাড়া সব ঠিকঠাক।’

কাউন্টার ছাড়া মাঝ-রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল সরেজমিনে। এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকারও করলেন বেশ কয়েকটি কাউন্টারের মাস্টার। পল্টন মোড়ের কাউন্টার মাস্টার সিফাত বলেন, ‘ড্রাইভারেরা রাস্তায় টিকিট ছাড়া যাত্রী নেয়। তাদের এমন আচরণ বন্ধ না করলে পরিবহনের ক্ষতি হবে।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমরা দুই-একটা যাত্রী তুলি। এটা আমাদের চা খরচের জন্য। আমাদের দিনে তো কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হয় না। তবে খুব বেশি যাত্রী টিকিট ছাড়া আমরা তুলি না।’

অভিযোগ আছে কাউন্টার মাস্টারদের নিয়েও। অনেক যাত্রীর অভিযোগ, কিছু কাউন্টার মাস্টার যাত্রীদের ঠিকমতো তথ্য দিতে চান না। বাস কখন আসবে—জানতে চাইলে বলেন, ‘সময় লাগবে।’ অনেকে যাত্রীদের অন্য গাড়িতে যাওয়ার কথাও বলেন। আবার বেসরকারি পরিবহনে যাত্রী তুলে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া বাসের সংখ্যা, কাউন্টারের অবস্থানগত জটিলতা ইত্যাদি সত্ত্বেও যাত্রীদের মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এই পরিবহন সেবা। বাস সংখ্যা বাড়লে এটি আরও জনপ্রিয় হবে বলেই মনে করেন কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা অনেকে। তাঁদের মতে, বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় জ্যামের কারণে একটা বাস আসতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লেগে যায়। তাই যাত্রী পাওয়া কঠিন হয়। জ্যামের কারণে টিকিট বিক্রিও কমেছে বলে জানালেন কেউ কেউ। আবার দিনের ব্যস্ত সময়ে টিকিট বেশি বিক্রি হলেও তখন যাত্রীদের স্থান-সংকুলান নিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হয়। নানা ব্যবস্থাপনাগত সংকট থাকলেও নগর পরিবহনের জনপ্রিয়তা যাত্রীদের মধ্যে বাড়ছে মূলত এর ভাড়ার হার ও এর নিয়ম মেনে চলার কারণে।

আজ শুক্রবার ধানমন্ডি-১৫ নম্বরের কাউন্টারে সামনে থেকে যাত্রী তুলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঝে টিকিট বিক্রি কমলেও এখন আবার বাড়ছে বলে জানালেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাঝে টিকিট বিক্রি কমেছিল তবে এখন আবার আগের চেয়ে বেড়েছে।’

মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আব্দুস শাকুর যেমন নগর পরিবহনের সেবায় সন্তুষ্ট। যতটা অভিযোগ, তা বাস-সংখ্যা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘অন্য বাসগুলোর সিট ভালো না। এই বাসের সিট পরিষ্কার। প্রতিটা সিটে ফ্যান আছে। তাই এই বাসেই আসা-যাওয়া করি। তবে বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় সব সময় বাস পাওয়া যায় না।’

যাত্রী ও কাউন্টার মাস্টারদের সঙ্গে কথা বলে যতটা বোঝা গেল, নিয়ম মেনে সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা গেলে এই পরিবহন যাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে আরও।

বিভিন্ন অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ওয়াকিবহাল। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও জানালেন ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিয়মিত পরিদর্শন অভিযান চলে। পুলিশও চেক করে। তবে এতেও কাজ না হলে আমরা কাউন্টারম্যানদের বদলে দিচ্ছি দ্রুতই।’

একই সঙ্গে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানালেন ধ্রুব। তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন রুটে আরও বাস নামানোর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত