Ajker Patrika

‘প্রশংসাপত্রের জন্য ২০০ টাকা দিতে হবে, ইউএনও স্যারের নির্দেশ’, বলেছেন প্রধান শিক্ষক

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ৪৩
Thumbnail image

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি উত্তীর্ণদের কাছ থেকে মার্কশিট, প্রশংসাপত্র ও সনদ দেওয়ার সময় ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ ফজলুল হকের বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে এই অভিযোগ করেছে তারা।

আজ সোমবার দুপুরে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের হল রুমে দুস্থ ও অসচ্ছল নারীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যের কাছে সরাসরি অভিযোগ করে তারা। এ সময় নাজমুল হাসান পাপন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— সংসদ সদস্যের স্ত্রী রোখসানা পাপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুসা জিসান, ইউএনও সাদিয়া ইসলাম লুনা, পৌর মেয়র সৈয়দ হাসান সারোয়ার মহসিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সিমন সরকার, ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

কয়েকজন শিক্ষার্থী সংসদ সদস্যের কাছে অভিযোগ করে বলে, এসএসসি পরীক্ষার পর কলেজে ভর্তির জন্য প্রশংসাপত্র নিতে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক প্রশংসাপত্রের জন্য ৩০০ টাকা চান। এই টাকা  সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেদিন তারা প্রশংসাপত্র না নিয়ে চলে যায়। তবে অনেকে টাকা দিয়ে অনেকে প্রশংসাপত্র নিয়েছে। পরদিন তারা স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘২০০ টাকা করে দিতে হবে এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী এ টাকাগুলো নেওয়া হচ্ছে।’

তখন ওই শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে বলে, ভর্তির সময় তারা নির্দেশনা পেয়েছে সে অনুযায়ী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দিয়েছে। তিনি তো এর বাইরে নগদ টাকা নিতে পারেন না। পরে তারা সেই টাকার রশিদ নেয়। এরপর ইউএনওর কাছে যায়। ইউএনও তাদের বলেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না। 

সংসদ সদস্যের কাছে প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ ফজলুল হকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলে, বার্ষিক পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্রে স্কুলের নাম ছিল না। স্কুল থেকে সিলেবাসের জন্য ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সহায়ক বই হিসেবে পপি কোম্পানির গাইড কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে।  উনি প্রধান শিক্ষক হয়ে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান করছেন এবং সেগুলো স্কুলের পাশেই।

অভিযোগ শুনে সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তোমাদের অভিযোগগুলো শুনলাম। এখানে ইউএনও মহোদয় আছেন উনি এটা তদন্ত করবেন। তদন্ত করার পর তদন্ত প্রতিবেদন আমার কাছে দেবে। আমি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইউএনওর নির্দেশে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুলিয়ারচর ইউএনও সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষককে এসব বলিনি। উনি মিথ্যা বলেছেন। প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ ফজলুল হকের বিরুদ্ধে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা গত ৪ এপ্রিল আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিতে আসে। পরে আমি শিক্ষার্থীদের বলি, আপনারা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তারা লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

কমিটিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সিমন সরকার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আলতাফ হোসেন ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।

ইউএনও আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। সম্প্রতি তাঁর কাছ থেকে বোর্ড পরীক্ষার ১ হাজার ২৩৮টি খাতা জব্দ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষা বোর্ডে চিঠি দিব আমরা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে কুলিয়ারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘প্রশংসাপত্রের জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হবে এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশ— এই কথা আমি বলি নাই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ২০১৮ সালে এই স্কুল সরকারি হয়। কিন্তু প্রশংসাপত্রের দেওয়ার জন্য স্কুলের রেজুলেশন এখনো পরিবর্তন হয়নি। তাই বেসরকারিভাবে প্রশংসাপত্রের জন্য ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়। ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রশংসাপত্রের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত