Ajker Patrika

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই কাল হলো নূরের জন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই কাল হলো নূরের জন্য

আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার অটোরিকশা চালক আলী নূর। ২০১৪ সাল থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও পরে পেশা বদলে হন অটোরিকশা চালক। তিন বছর আগে পরিচয় হয় আরেক গার্মেন্টস কর্মী আহিনা খাতুনের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। স্বামী পরিত্যক্তা এক সন্তানের মা আহিনা নূরের সঙ্গে বিয়ে ছাড়াই একই বাসায় থাকতে শুরু করেন। সম্প্রতি নূর তাঁর গ্রামের বাড়ি গিয়ে আবার বিয়ে করেন, যা আহিনাকে ক্ষুব্ধ করে। এরই জেরে গত ৩০ জুলাই রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নূরকে কুপিয়ে হত্যা করেন আহিনা। 

হত্যার পর নারায়ণগঞ্জের কাচপুরে গিয়ে আত্মগোপনে থাকা আহিনাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যার বিস্তারিত তুলে ধরেন র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি (পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোজাম্মেল হক। 

মোজাম্মেল হক জানান, মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা থেকে ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে চাকরি নেন আলী নূর। পরে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন তিনি। ২০১৯ সালে পরিচয় হয় আহিনা খাতুনের সঙ্গে। সম্পর্কের গভীরতা, সখ্য থেকে বিয়ে ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। নিজেদের পরিবারকে না জানিয়েই তাঁরা তিন বছরে পাঁচবার বাসা পরিবর্তন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত জুলাইয়ের শুরুতে আলী নূর কিছুদিনের জন্য মাগুরায় গ্রামের বাড়ি যান। ওই সময় আহিনা খাতুন জানতে পারেন, আলী নূর গ্রামের অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। পরে ১৭ জুলাই ঢাকায় ফিরলে তাঁদের মধ্যে মান-অভিমান শুরু হয়। না জানিয়ে বিয়ে করায় আলী নূরের ওপর ক্ষিপ্ত হন আহিনা। গোপনে আলী নূরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 

গত ৩০ জুলাই রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন আলী নূর। ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে আলী নূরের মোবাইলসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যান আহিনা খাতুন। পরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় গার্মেন্টসকর্মী পরিচয় দিয়ে ২২০০ টাকায় নতুন একটি বাসা ভাড়া নেন। 

আহিনা বিবেকের তাড়নায় ঘটনার পরদিন ৩১ জুলাই বিকেলে আলী নূরের মোবাইল থেকে ভগ্নীপতি জনৈক জাকিরকে জানান, ‘আলী নূর অসুস্থ অবস্থায় আছে, তাঁকে বাঁচান।’ 

পরদিন (১ আগস্ট) দুপুরে আলী নূরের আত্মীয়-স্বজন জিরাবো এলাকায় দেলোয়ার ব্যাপারীর ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখেন, রুমের দরজা তালাবদ্ধ। বাসার মালিক ও স্থানীয়দের সহায়তায় জানালা খুললে রুমের ভেতর থেকে তীব্র দুর্গন্ধসহ মেঝেতে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় আলী নূরের মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। পরে আশুলিয়া থানা-পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। 

সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গত ২ আগস্ট নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-৪ জড়িতদের গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামি মোছা. আহিনা খাতুনকে (২৯) র‍্যাব-৪ এর একটি দল গতকাল মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতেই অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। 

গ্রেপ্তার আহিনা নীলফামারীর একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০১৩ সালে তাঁর প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেই ঘরের সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ২০১৮ সালে তিনি ঢাকায় আসেন এবং আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত