Ajker Patrika

সহজ ডটকমের পিয়ন মিজানের কবজায় ট্রেনের টিকিট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪, ১৬: ১২
Thumbnail image

মিজান ঢালী পেশায় বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট ব্যবস্থাপনায় থাকা সহজ ডটকমের পিয়ন। ২০০৩ সালে তিনি রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেফোডিলের কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশব্যাপী গড়ে তুলেছেন টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট। সহজের কর্মী হলেও গ্রাহকদের জন্য টিকিট পাওয়া কঠিন করে তুলেছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি তিনি ধরা পড়েছেন র‍্যাবের হাতে। 

র‍্যাব জানিয়েছে, মিজান ঢালী ছাড়াও এই টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত সোহেল ও নিউটন বিশ্বাস, মো. সুমন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাহজালাল হোসেন, মো. রাসেল, মো. জয়নাল আবেদীন ও মো. সবুর হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)। এ সময় তাঁদের কাছে থেকে কালোবাজারির আলামতসহ অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুত বিপুলসংখ্যক ট্রেনের টিকিট উদ্ধার করা হয়। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মিজান ২০০৩ সালে ডেফোডিলে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন কমলাপুর শাখায়। পরে বাংলাদেশ রেলওয়ে সিএনএসবিডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাঁকে সেখানেও রাখা হয়। সর্বশেষ সহজ ডট কমের সঙ্গেও এই ঢালী কাজ করছেন। 

র‍্যাবের মুখপাত্র জানান, দীর্ঘদিন টিকিট বুকিংয়ের এমন স্পর্শকাতর জায়গায় কাজ করে মিজান দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। ভাতিজা সোহেল ঢালীকে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন কমলাপুর স্টেশনে। সোহেলকে নিয়ে সহজের সার্ভার অপারেটরসহ প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন পদস্থ ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে গড়েছেন রেলের টিকিট কালোবাজারির সিন্ডিকেট। 

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্য ও তাদের কাছ থেকে জব্দ বিভিন্ন প্রমাণের ছবি। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ঢালী সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যসহ গ্রেপ্তার হওয়া সুমন, শাহজালাল, জাহাঙ্গীর, জয়নাল ও রাসেল মিজানকে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা দিত। পরে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী মিজান ঢালী অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য তাঁদের কাছে সরবরাহ করতেন।

সুমনের বিষয়ে র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, সুমন সিএনএসবিডিতে চাকরি করতেন। পরে সহজ ডট কমের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর সে চাকরি বাদ দিয়ে মিজান ও সোহেলের ঢালী সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়ে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা ট্রেনের টিকিট বিক্রয় শুরু করে। এ ছাড়া শাহজালাল পাঠাওচালক, জাহাঙ্গীর কমলাপুরে একটি আবাসিক হোটেলের ক্লিনার, রাসেল একই আবাসিক হোটেলের বয় এবং জয়নাল অপর একটি আবাসিক হোটেলের বয়। তাঁরা নিজেদের কাজের পাশাপাশি সব সময় অবৈধ উপায়ে টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রী জোগাড় করে নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করতেন টিকিটগুলো। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশীদের কাছে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে টিকিট পাঠাতেন। 

খন্দকার আল মঈন জানান, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে এই চক্র সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিকসংখ্যক টিকিট সংগ্রহ করত। মিজান ও সোহেল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডট কমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় দুই-তিন হাজার টিকিট কালোবাজারি করতেন। এই চক্রের প্রত্যেকেই টিকিট কালোবাজারির করে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। টিকিট বিক্রির আয়ের টাকা দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ৫০ ভাগ পায় সহজ ডট কম ও রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা এবং বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের মূল হোতা মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হয়। এই চক্রের সঙ্গে সহজের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখছে র‍্যাব।

তবে কয়েকজন কর্মীর দায়ভার নিতে নারাজ সহজ ডট কম। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ দেবনাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েকজন কর্মীর দায়ভার প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। টিকিট কালোবাজারি রুখতে আমরা গত রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করেছি। আমরাও কালোবাজারির বিরুদ্ধে। আমরাও চাই এটা একদম গোড়া থেকে নির্মূল হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত