Ajker Patrika

চিনি ও টি ব্যাগে ক্ষতিকর মাইক্রো প্লাস্টিক: গবেষণা

বেলাল হোসেন, জাবি
চিনি ও টি ব্যাগে ক্ষতিকর মাইক্রো প্লাস্টিক: গবেষণা

দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনি ও টি ব্যাগে ক্ষতিকর উপাদান মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। এমন দাবি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। পৃথক দুটি গবেষণায় এমন কিছুর সন্ধান পেয়েছেন বলে প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করেন তাঁরা। 

‘ইজ দেয়ার টি কমপ্লিমেন্টেড উইথ দি এ্যাপেইলিং ফ্লেভার অব মাইক্রো প্লাস্টিক? এ পায়োনিয়ারিং স্টাডি অন প্লাস্টিক পলিউশন ইন কমার্শিয়ালি এভেইলএবল টি ব্যাগস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটি আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল ইনভায়রনমেন্টে’ প্রকাশিত হয়েছে। চিনি সংক্রান্ত গবেষণাটিও একই জার্নালে গৃহীত হয়েছে। 

দুটি গবেষণাতেই অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন এবং ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব গোয়াসের গুইলহার্ম মেলাফিয়া। 

চিনি সংক্রান্ত নিবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাজারের অন্তত ৫টি ব্র্যান্ডের চিনিতে আশঙ্কাজনক মাত্রায় মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার শরীরে কেবল চিনির মাধ্যমেই প্রতিবছর গড়ে ১০.২ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রবেশ করাতে পারে।’ 

এতে দাবি করা হয়, ‘রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা ৫টি ব্রান্ড ও দুটি নন ব্র্যান্ডের চিনিতে কেজিপ্রতি গড়ে ৩৪৩.৭টি প্লাস্টিক কণা রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ কণাই ৩০০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট আকারের কালো, গোলাপি, নীল, এবং বাদামি বর্ণের। এ ছাড়াও এসব প্লাস্টিক কণার মধ্যে রয়েছে এবিএস, পিভিসি, পিইটি, ইভিএ, সিএ, পিটিএফই, এইচডিপিই, পিসি ও নাইলন নামক রাসায়নিক কণা।’ 

এদিকে টি ব্যাগের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, ‘নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত ৫টি ব্র্যান্ডের টি-ব্যাগে পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন, হাই ডেনসিটি পলিথিলিন, পলিকার্বোনেট, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, নাইলন, ইথিলিন ভিনাইল এসিটেট, সেলুলোজ এসিটেট এবং এবিএস প্রভৃতি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ইথিলিন ভিনাইল এসিটেট, এবিএস এবং সেলুলোজ এসিটেটের আধিক্য তুলনামূলক বেশি। এসব আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক কণা আকারে প্রায় ৩৩ থেকে ২ হাজার ১৮০ মাইক্রো মিটার। মাইক্রো প্লাস্টিকগুলোর কিছু তন্তু আকৃতির, কিছু টুকরা, কিছু গোলক আকৃতির এবং কিছু ঝিল্লি আকৃতির।’ 

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ‘টি ব্যাগগুলোতে প্রায় ৯ ধরনের রং পাওয়া গেছে। যার মধ্যে বাদামি, নীল ও লাল রঙের প্রাধান্য বেশি। একটি চা পাতা ভর্তি টি-ব্যাগে ৫০৫টি এবং খালি টি-ব্যাগে ৪৭৭টি প্লাস্টিকের কণা রয়েছে। টি-ব্যাগের চা পানের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ১০.৯ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢাকায় বসবাসকারীদের দেহে প্রবেশ করতে পারে।’ 

তবে, দুটি গবেষণাতেই নমুনা হিসেবে পরীক্ষিত ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ করেননি গবেষকেরা। দেশীয় পণ্যের ওপর এ ধরনের গবেষণা বাজারে প্রভাব ফেলবে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে ভোক্তাদের বিকল্প নেই। তা ছাড়া খাদ্যের মান যাচাইকারী সংস্থাগুলোর মানদণ্ডে মাইক্রো প্লাস্টিকের বিষয়টি এখনো অনুল্লেখিত। এই অবস্থায় খাদ্যের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি। তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সঠিক নীতি নির্ধারণ করতে পারবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর বিভিন্ন খাদ্যেও মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। মূলত এই সমস্যার উৎস হিসেবে বাজারজাত ও মোড়কীকরণকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই সম্ভাবনাই বেশি যে খাবার প্রক্রিয়াকরণের সময়ই মাইক্রো প্লাস্টিক সংযুক্ত হয়ে যায়।’ 

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞগণ বলেন, মানবদেহে মাইক্রো প্লাস্টিকের প্রবেশ কিংবা উপস্থিতি উদ্বেগজনক। কিন্তু পরিতাপের বিষয় মানবদেহে এর প্রভাব নিয়ে সারা বিশ্বেই গবেষণা খুবই অপ্রতুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত