Ajker Patrika

আতঙ্কের নাম গ্যাস বিস্ফোরণ

  • ২০২৪ সালে গ্যাস লিকেজ থেকে ১১৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
  • সর্বশেষ ৩ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জে লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৮ জন দগ্ধ হয়।
  • বাসার ভেতরে দুর্ঘটনার বিষয়ে গ্রাহককে সচেতন হতে হবে: তিতাস
সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ 
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৩৩
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত

লাইনের গ্যাস কিংবা সিলিন্ডার—কোনো কিছুই যেন নিরাপদ নয়। ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জে কিছুদিন পরপর গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হচ্ছে। ঘটছে প্রাণহানি। এসব দুর্ঘটনার নেপথ্যে কেউ দায়ী করেন গ্যাস পাইপের লিকেজ, আবার কেউ অসচেতনতাকে। ফায়ার সার্ভিসের বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে গ্যাস লিকেজ থেকে ১১৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ১৬টি অগ্নিকাণ্ড ও ৫টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তল্লা জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৩৪ মুসল্লি। বিস্ফোরণের এমন ভয়াবহতা ও প্রাণহানির পর জেলাজুড়ে তিতাস গ্যাস পাইপ সংস্কারের তোড়জোড় শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে গ্যাসলাইন মেরামতে তিতাস কর্মকর্তাদের ঘুষ চাওয়ার। ঘটনার পরও আশানুরূপ পরিবর্তন আসেনি তিতাসের লাইনে। এখনো জেলার বিভিন্ন স্থানে তিতাস পাইপের লিকেজ থেকে ঘটছে বিস্ফোরণের ঘটনা।

সর্বশেষ ৩ মার্চ দিবাগত রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকেশ্বরী এলাকায় গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে নারী, শিশুসহ ৮ জন দগ্ধ হয়। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গত ১২ নভেম্বর সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে গ্যাসের মেইন লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৭ শ্রমিক দগ্ধ হন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তিতাস গ্যাসের বহু পাইপে লিকেজ রয়েছে। যেগুলো থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে গ্যাসের চাহিদা বেশি থাকায় অনেক সময়েই গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে অনেকেই গ্যাস কখন আসবে, তা বোঝার জন্য চুলার চাবি চালু করে রাখে। এখান থেকে ঘরে গ্যাস চেম্বার হয়ে অনেক সময় বিস্ফোরণ হয়। আমাদের অনেক পাইপ পুরোনো হয়েছে, এটা সঠিক। তবে লিকেজের অভিযোগ পেলেই সেগুলো মেরামত করে দিই। বাসার ভেতরে দুর্ঘটনার বিষয়ে গ্রাহককে সচেতন হতে হবে।’

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, ‘গ্যাস বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে আমরা প্রায়ই দেখি অনেক গ্যাসের লাইনের রাইজার থেকে গ্যাস লিক করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলেও পাইপ জরাজীর্ণ হয়ে লিক হয়। সেই লিক থেকেই দীর্ঘক্ষণ দরজা-জানালা বন্ধ রাখলে চেম্বার তৈরি হয়, পরে আগুনের সংস্পর্শ পেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা মহড়াসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। বাসাবাড়িতে সংঘটিত বিস্ফোরণে আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, এসবের অধিকাংশই ছিল গ্যাস লিকেজ বা চুলা জ্বালিয়ে রাখার মতো ঘটনা। ফলে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত