Ajker Patrika

দক্ষিণখানে জিনের বাদশাসহ গ্রেপ্তার ৩

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

‘কাগজ হয়ে যায় টাকা’ ও ‘অসুস্থ হলে সুস্থ করে দেবে জিন’। এ রকম নানা কৌশল অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে কথিত জিনের বাদশাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পঞ্চগড় জেলার আবুল হোসেনের ছেলে সারোয়ার হোসেন (২৭), একই জেলার নজরুল ইসলামের ছেলে লাজু পারভেজ (২৭) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খবির হোসেনের ছেলে আব্দুর রহমান (২৪)।
 
র‍্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নোমান আহমদ আজ বৃহস্পতিবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, দক্ষিণখানের কোটবাড়ি বাজার এলাকা থেকে গতকাল বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে কথিত জিনের বাদশাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রটি নিরীহ মানুষকে রোগ হতে মুক্তিদান, স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।  

গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে ১টি পাসপোর্ট, ১টি চেকবই, ৭টি এটিএম কার্ড, ১টি জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ১টি ল্যাপটপ ও চার্জার, ২টি কালার মাইক্রোফোন, ১টি ক্যামেরা ও ৩টি ক্যামেরা স্ট্যান্ড, ২টি সিসি ক্যামেরা, ১টি জন্ম নিবন্ধনের কপি, ২টি সাউন্ড বক্স, ১০টি হিসাবের খাতা, ৯০০ টাকা মূল্যমানের জালনোট, ৬টি মোবাইল, ৯টি সিম কার্ড, নগদ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের ফরম জব্দ করা হয়। 

এএসপি নোমান আহমদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। প্রতারক চক্রের মূল হোতা সারোয়ার হোসেন এবং বাকি দুজন তার অন্যতম সহযোগী। চক্রটি সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। পরে বিভিন্ন জেলার থেকে হতদরিদ্র সাধারণ নিরীহ মানুষদের রোগ হতে মুক্তিদান, স্বল্প সময়ে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রলোভন দেখাত। তাতে স্বল্প আয়ের মানুষেরা সহজেই প্রলুব্ধ হতো। 

তিনি বলেন, চক্রটি হতদরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা বাবদ প্রথম সাক্ষাতে এক হাজার টাকা করে নেন। পরবর্তীতে তারা গরিব অসহায় রোগীদের নিকট থেকে বিভিন্ন ধাপে ঝাড়ফুঁক, জিন তাড়ানোসহ ভুয়া কবিরাজি চিকিৎসার নামে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে নিত। সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণা সম্পর্কে জানার আগেই চক্রটি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করত। পরে নতুন এলাকায় গিয়ে পুনরায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। এভাবে তারা শত শত সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায়। 

র‍্যাব-১ এর এই কর্মকর্তা বলেন, সারোয়ার হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- সে মূলত একজন পোশাক শ্রমিক ছিল। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি। সে কোনো দিন মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেনি। চিকিৎসা বিদ্যায় কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেই। তবুও সে নিজেকে চিকিৎসক ও মাওলানা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছিল। 

সারোয়ার হোসেন তাঁর সহযোগীদের নিয়ে ২০১৯ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরের লতিফপুর এলাকায় ভুয়া কবিরাজির মাধ্যমে অসহায় নিরীহ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতারণা সম্পর্কে জানার আগেই তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ঢাকার দক্ষিণখান ফায়দাবাদ এলাকায় আসে। সেই সঙ্গে পুনরায় সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতে থাকে বলে জানায়।

নোমান আহমদ বলেন, প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে সারোয়ার প্রথমে ফেসবুক ও ইউটিউবে ‘মুমিন মুসলমান’ নামক চ্যানেল খোলে। পরবর্তীতে সেখানে জিন, জাদুটোনা, ব্ল্যাকমেল, বদনজর, কুফরি কালাম, বান ও পোতে রাখার প্রভাবে মানুষের যে ক্ষতি হয় তার সমাধান করতে পারে বলে নিয়মিত প্রচার করতে থাকে। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে আরোগ্য হওয়ার আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান হতে হতদরিদ্র শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ পুরুষ ও মহিলা তাদের নিকট চিকিৎসার জন্য আসত। তাদের কাছে নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানা গেছে। 

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত