Ajker Patrika

ছাপা বইয়ের নানা বিকল্প

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
স্টলে বই দেখছেন দুই তরুণী। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্টলে বই দেখছেন দুই তরুণী। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে কাব্যিক অডিওবুকের স্টল। নামেই বোঝা যায়, এখানে কাগজের কোনো সম্পর্ক নেই। স্টলে নেই কোনো বইয়ের তাক। সঙ্গে একটি মোবাইল থাকলেই হলো।

স্টলের বিক্রয়কর্মী বৃষ্টি জানান কাব্যিক-এর আদ্যোপান্ত। তিনি বলেন, অডিওবুক আসলে বই শোনার অ্যাপস। তিন হাজারের বেশি বই শোনা যায় এখানে। সাবস্ক্রাইব করে যে কেউ বই শুনতে পারবেন। নির্ধারিত টাকায় নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত সুযোগ থাকবে শোনার।

বই মানেই বাহারি প্রচ্ছদ, কাগজে ছাপার অক্ষর। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতিতে বই এখন শোনাও যায়। মেলায় তাই অডিওবুকের জন্যও রাখা হয়েছে স্টল। অডিওবুক কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে এখন? কাব্যিক অডিও বুকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আরাফাত ইসলাম নিলয় বললেন, নতুন প্রজন্ম থেকে অডিওবুকের প্রতিক্রিয়া ভালো। ধ্রুপদি, রোমান্স, রহস্য, ভৌতিক, ড্রামা, কবিতা, অনুবাদ, উপন্যাস, গল্প, শিশুতোষসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর শোনার জন্য বই পাওয়া যায়।

এমন অডিওবুকের স্টল আরও আছে। কাহিনিক অডিওবুক তাদের মধ্যে একটি। প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, মেলায় তাঁদের সাবস্ক্রিপশন খারাপ নয়। তরুণদের অনেকে এখন শুনতে পছন্দ করেন; বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনে কোথাও যেতে যেতে এখন শুনতে চান জেনজিরা।

এ ছাড়া স্টল রয়েছে ই-বুকেরও। অনলাইন বই বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান রকমারির আছে ই-বুক।

বইটই নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানও বিক্রি করে ই-বুক।

অডিওবুকে বই শোনেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘এখন আমরা গ্যাজেটে বেশি সময় কাটাই। সে ক্ষেত্রে গ্যাজেটের মাধ্যমে ই-বুকে বই পড়া যায় আবার শোনাও যায়। বই বহন করতে হয় না। সবকিছু মিলিয়ে আমি এখন এতে অভ্যস্ত। তবে বইও পড়ি।’

মেলায় ব্যতিক্রম স্টল বিজ্ঞানবাক্স। সেখানে আছে ছোটদের জন্য হাতেকলমে বিজ্ঞান শেখার আয়োজন। স্টলের কাস্টমার রিলেশন কর্মকর্তা জানালেন, ১০টি বিজ্ঞানবাক্স আছে তাঁদের। প্রতিটি বিজ্ঞানবাক্সের সঙ্গে থাকছে একটি ম্যানুয়াল। ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা মিলবে একেকটি বাক্সে। আলোর ঝলক, তড়িৎ তাণ্ডব, অদ্ভুত মাপজোখ, চুম্বকের চমকের মতো প্রতিটি বাক্সের আছে ভিন্ন নাম। শিশু-কিশোরেরা পাঠ্যবইয়ে যেসব বিজ্ঞানের তত্ত্ব পড়ে, সেগুলোর ব্যবহারিক দিক নিয়ে সাজানো হয়েছে বাক্সগুলো। এর মাধ্যমে হাতেকলমে বিজ্ঞান শিখতে পারবে। বাচ্চাদের আগ্রহ আছে। বিক্রি ভালো চলছে।

এ ছাড়া আকিজ মনোয়ারা প্রকাশনী শিশুদের নৈতিক শিক্ষার জন্য তৈরি করেছে সাকিবের পাঠশালা নামের অনুষ্ঠান। শিশুরা ইউটিউবে এগুলো দেখতে পারবে।

মেলায় ধারাপাত নামের একটি স্টলে চোখ যায়। সেখানে লেখা প্রথম বাংলা ক্যালকুলেটর উদ্ভাবন সম্পর্কে। জানা গেল ড. মো. মাহমুদ হাসান বাংলা ফন্ট নিয়ে গবেষণা করেছিলেন আশির দশকে। বাংলা একাডেমির ‘বাংলা মুদ্রাক্ষরযন্ত্রের উন্নতি সাধন ও বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্পে’ কাজ করেছিলেন। এবার তিনি বইমেলায় নিয়ে এসেছেন বাংলা ক্যালকুলেটর। তাঁর ইচ্ছা, ইংরেজি বর্ণের পরিবর্তে মানুষ বাংলা বর্ণে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে শিখুক।

কাগজের বইয়ের পাশাপাশি এমন নানা অনুষঙ্গ মেলায়। তাতে আগ্রহও দেখা গেল পাঠকের। গতকাল মেলা ছিল ছিমছাম। দর্শনার্থীরাও ছিল মোটামুটি।

নতুন বইয়ের খোঁজে

মীর মশাররফ হোসেনকে নিয়ে ৫০ বছর ধরে চর্চা করছেন আবুল আহসান চৌধুরী। একাল যাবৎ মশাররফের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এবার তিনি তুলে ধরেছেন মশাররফের নানা দিক। তাতে আছে নাটক, অপ্রকাশিত ডায়েরি, প্রবন্ধ। ‘আমার মীর মশাররফ’ নামে বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য।

আনু মুহাম্মদের বই ‘অরক্ষিত দেশ অরক্ষিত মানুষ’। সৌম্য প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বইটিতে একসঙ্গে পাওয়া যাবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বের হওয়া তাঁর কলামগুলো।

এ ছাড়া নবরাগ প্রকাশনী থেকে এসেছে রফিকুর রশীদের গল্পগ্রন্থ ‘অশনিপাতের দিন ও অন্যান্য গল্প’, সৌম্য প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে রুশো তাহেরের বিজ্ঞান নিয়ে বই ‘বিগব্যাং থেকে মানুষ’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস থেকে দন্ত্যস রওশনের ‘ছোটদের অণুকাব্য’ বেরিয়েছে।

গতকাল নতুন বই এসেছে ৯৮টি। এ পর্যন্ত মোট বই ২ হাজার ৫২১টি।

আয়োজন

মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন-আকাঙ্ক্ষার নাট্যকলা—যাত্রা: ঐতিহ্যের পরম্পরায় জাতীয়তাবাদী শিল্পরীতি এবং অমলেন্দু বিশ্বাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশ নেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করেন মিলনকান্তি দে।

সাইদুর রহমান লিপন বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রীতি-পদ্ধতির সর্বাধিক জনসম্পৃক্ত একটি নাট্যধারা—যাত্রা। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যাত্রাশিল্পের জগতে স্বদেশীয় রাজনীতি ও দ্রোহচেতনার বিস্তারে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন অমলেন্দু বিশ্বাস।

সাইদুর রহমান আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশের যাত্রাশিল্পে পশ্চিমবঙ্গের মুখাপেক্ষিতা থেকে বের হয়ে দেশীয় নাট্যকারদের দিয়ে নাটলিপি রচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে যাত্রাদলের মালিক ও পরিচালকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মিলনকান্তি দে বলেন, যাত্রাশিল্পের মানসপুত্র হিসেবে অভিহিত করা যায় অমলেন্দু বিশ্বাসকে। তাঁর শিল্প-চেতনায় ছিল লোকজ আঙ্গিকের সঙ্গে আধুনিক নাট্যরীতির সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস। তাঁর অভিনয়, যাত্রাদর্শন ও চিন্তাচেতনা গভীরতর গবেষণার দাবি রাখে।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শাহীন রেজা, কবি এজাজ ইউসুফী এবং কবি শোভা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি ফাতিমা তামান্না, টোকন ঠাকুর ও রশিদ কামাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহবুব মুকুল ও নূরুল হাসনাত জিলান। গতকাল সেলিনা ফারজানা কেয়ার পরিচালনায় ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’ এবং আলী আশরাফ আখন্দের পরিচালনায় ‘জিয়া সাংস্কৃতিক জোট’-এর পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আহমেদ শাকিল হাসমী, মো. ইকবাল হোসেন, শাহ আল চৌধুরী মিন্টু, বিমল দাস, দিপা আফ্রিদি, রোমানা আক্তার, মিসেস খালেদা বেগম, রাতুল শাহ, শেলী চন্দ, আঞ্জুমান আরা শিমুল, মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, আজমা সুরাইয়া শিল্পী, নাফিসা ইসলাম ফাইজা।

আজ মেলা শুরু হবে বেলা তিনটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান: গ্রাফিতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশ নেবেন তাসলিমা আখতার ও কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করবেন ফারুক ওয়াসিফ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত