Ajker Patrika

ছাপা বইয়ের নানা বিকল্প

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
স্টলে বই দেখছেন দুই তরুণী। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্টলে বই দেখছেন দুই তরুণী। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে কাব্যিক অডিওবুকের স্টল। নামেই বোঝা যায়, এখানে কাগজের কোনো সম্পর্ক নেই। স্টলে নেই কোনো বইয়ের তাক। সঙ্গে একটি মোবাইল থাকলেই হলো।

স্টলের বিক্রয়কর্মী বৃষ্টি জানান কাব্যিক-এর আদ্যোপান্ত। তিনি বলেন, অডিওবুক আসলে বই শোনার অ্যাপস। তিন হাজারের বেশি বই শোনা যায় এখানে। সাবস্ক্রাইব করে যে কেউ বই শুনতে পারবেন। নির্ধারিত টাকায় নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত সুযোগ থাকবে শোনার।

বই মানেই বাহারি প্রচ্ছদ, কাগজে ছাপার অক্ষর। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতিতে বই এখন শোনাও যায়। মেলায় তাই অডিওবুকের জন্যও রাখা হয়েছে স্টল। অডিওবুক কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে এখন? কাব্যিক অডিও বুকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আরাফাত ইসলাম নিলয় বললেন, নতুন প্রজন্ম থেকে অডিওবুকের প্রতিক্রিয়া ভালো। ধ্রুপদি, রোমান্স, রহস্য, ভৌতিক, ড্রামা, কবিতা, অনুবাদ, উপন্যাস, গল্প, শিশুতোষসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর শোনার জন্য বই পাওয়া যায়।

এমন অডিওবুকের স্টল আরও আছে। কাহিনিক অডিওবুক তাদের মধ্যে একটি। প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, মেলায় তাঁদের সাবস্ক্রিপশন খারাপ নয়। তরুণদের অনেকে এখন শুনতে পছন্দ করেন; বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনে কোথাও যেতে যেতে এখন শুনতে চান জেনজিরা।

এ ছাড়া স্টল রয়েছে ই-বুকেরও। অনলাইন বই বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান রকমারির আছে ই-বুক।

বইটই নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানও বিক্রি করে ই-বুক।

অডিওবুকে বই শোনেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘এখন আমরা গ্যাজেটে বেশি সময় কাটাই। সে ক্ষেত্রে গ্যাজেটের মাধ্যমে ই-বুকে বই পড়া যায় আবার শোনাও যায়। বই বহন করতে হয় না। সবকিছু মিলিয়ে আমি এখন এতে অভ্যস্ত। তবে বইও পড়ি।’

মেলায় ব্যতিক্রম স্টল বিজ্ঞানবাক্স। সেখানে আছে ছোটদের জন্য হাতেকলমে বিজ্ঞান শেখার আয়োজন। স্টলের কাস্টমার রিলেশন কর্মকর্তা জানালেন, ১০টি বিজ্ঞানবাক্স আছে তাঁদের। প্রতিটি বিজ্ঞানবাক্সের সঙ্গে থাকছে একটি ম্যানুয়াল। ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা মিলবে একেকটি বাক্সে। আলোর ঝলক, তড়িৎ তাণ্ডব, অদ্ভুত মাপজোখ, চুম্বকের চমকের মতো প্রতিটি বাক্সের আছে ভিন্ন নাম। শিশু-কিশোরেরা পাঠ্যবইয়ে যেসব বিজ্ঞানের তত্ত্ব পড়ে, সেগুলোর ব্যবহারিক দিক নিয়ে সাজানো হয়েছে বাক্সগুলো। এর মাধ্যমে হাতেকলমে বিজ্ঞান শিখতে পারবে। বাচ্চাদের আগ্রহ আছে। বিক্রি ভালো চলছে।

এ ছাড়া আকিজ মনোয়ারা প্রকাশনী শিশুদের নৈতিক শিক্ষার জন্য তৈরি করেছে সাকিবের পাঠশালা নামের অনুষ্ঠান। শিশুরা ইউটিউবে এগুলো দেখতে পারবে।

মেলায় ধারাপাত নামের একটি স্টলে চোখ যায়। সেখানে লেখা প্রথম বাংলা ক্যালকুলেটর উদ্ভাবন সম্পর্কে। জানা গেল ড. মো. মাহমুদ হাসান বাংলা ফন্ট নিয়ে গবেষণা করেছিলেন আশির দশকে। বাংলা একাডেমির ‘বাংলা মুদ্রাক্ষরযন্ত্রের উন্নতি সাধন ও বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্পে’ কাজ করেছিলেন। এবার তিনি বইমেলায় নিয়ে এসেছেন বাংলা ক্যালকুলেটর। তাঁর ইচ্ছা, ইংরেজি বর্ণের পরিবর্তে মানুষ বাংলা বর্ণে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে শিখুক।

কাগজের বইয়ের পাশাপাশি এমন নানা অনুষঙ্গ মেলায়। তাতে আগ্রহও দেখা গেল পাঠকের। গতকাল মেলা ছিল ছিমছাম। দর্শনার্থীরাও ছিল মোটামুটি।

নতুন বইয়ের খোঁজে

মীর মশাররফ হোসেনকে নিয়ে ৫০ বছর ধরে চর্চা করছেন আবুল আহসান চৌধুরী। একাল যাবৎ মশাররফের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এবার তিনি তুলে ধরেছেন মশাররফের নানা দিক। তাতে আছে নাটক, অপ্রকাশিত ডায়েরি, প্রবন্ধ। ‘আমার মীর মশাররফ’ নামে বইটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য।

আনু মুহাম্মদের বই ‘অরক্ষিত দেশ অরক্ষিত মানুষ’। সৌম্য প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বইটিতে একসঙ্গে পাওয়া যাবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বের হওয়া তাঁর কলামগুলো।

এ ছাড়া নবরাগ প্রকাশনী থেকে এসেছে রফিকুর রশীদের গল্পগ্রন্থ ‘অশনিপাতের দিন ও অন্যান্য গল্প’, সৌম্য প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে রুশো তাহেরের বিজ্ঞান নিয়ে বই ‘বিগব্যাং থেকে মানুষ’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস থেকে দন্ত্যস রওশনের ‘ছোটদের অণুকাব্য’ বেরিয়েছে।

গতকাল নতুন বই এসেছে ৯৮টি। এ পর্যন্ত মোট বই ২ হাজার ৫২১টি।

আয়োজন

মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন-আকাঙ্ক্ষার নাট্যকলা—যাত্রা: ঐতিহ্যের পরম্পরায় জাতীয়তাবাদী শিল্পরীতি এবং অমলেন্দু বিশ্বাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশ নেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করেন মিলনকান্তি দে।

সাইদুর রহমান লিপন বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রীতি-পদ্ধতির সর্বাধিক জনসম্পৃক্ত একটি নাট্যধারা—যাত্রা। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যাত্রাশিল্পের জগতে স্বদেশীয় রাজনীতি ও দ্রোহচেতনার বিস্তারে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন অমলেন্দু বিশ্বাস।

সাইদুর রহমান আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশের যাত্রাশিল্পে পশ্চিমবঙ্গের মুখাপেক্ষিতা থেকে বের হয়ে দেশীয় নাট্যকারদের দিয়ে নাটলিপি রচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে যাত্রাদলের মালিক ও পরিচালকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মিলনকান্তি দে বলেন, যাত্রাশিল্পের মানসপুত্র হিসেবে অভিহিত করা যায় অমলেন্দু বিশ্বাসকে। তাঁর শিল্প-চেতনায় ছিল লোকজ আঙ্গিকের সঙ্গে আধুনিক নাট্যরীতির সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস। তাঁর অভিনয়, যাত্রাদর্শন ও চিন্তাচেতনা গভীরতর গবেষণার দাবি রাখে।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শাহীন রেজা, কবি এজাজ ইউসুফী এবং কবি শোভা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি ফাতিমা তামান্না, টোকন ঠাকুর ও রশিদ কামাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাহবুব মুকুল ও নূরুল হাসনাত জিলান। গতকাল সেলিনা ফারজানা কেয়ার পরিচালনায় ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’ এবং আলী আশরাফ আখন্দের পরিচালনায় ‘জিয়া সাংস্কৃতিক জোট’-এর পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আহমেদ শাকিল হাসমী, মো. ইকবাল হোসেন, শাহ আল চৌধুরী মিন্টু, বিমল দাস, দিপা আফ্রিদি, রোমানা আক্তার, মিসেস খালেদা বেগম, রাতুল শাহ, শেলী চন্দ, আঞ্জুমান আরা শিমুল, মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, আজমা সুরাইয়া শিল্পী, নাফিসা ইসলাম ফাইজা।

আজ মেলা শুরু হবে বেলা তিনটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান: গ্রাফিতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশ নেবেন তাসলিমা আখতার ও কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করবেন ফারুক ওয়াসিফ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত