Ajker Patrika

মেট্রোরেল চলাচলে প্রস্তুত, তবে বাধা কর্মবিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪, ১১: ২৬
মেট্রোরেল চলাচলে প্রস্তুত, তবে বাধা কর্মবিরতি

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ দিন পার হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও চালু হচ্ছে না রাজধানী ঢাকার অন্যতম গণপরিবহন মেট্রোরেল। কবে চালু হবে তা নিয়ে কোনো ধারণাও কেউ দিতে পারছেন না।

তবে চাইলে যেকোনো সময় মেট্রোরেল চালু করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ১০ থেকে ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীরা। কিন্তু গত ৬ আগস্ট থেকে বেতন বৈষম্যের কারণে তাঁরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। 

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এসব কথা জানান।

সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন সম্প্রতি দুর্বৃত্ত কর্তৃক মেট্রোরেলের স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আপাতত মেট্রো অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তবে অপারেশন বন্ধ থাকলেও অন্যান্য স্টেশনসমূহে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীগণ কর্তৃক শিডিউল মেইনটেন্যান্স করে মেট্রো পরিচালনার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠ বিভাগের সকল কর্মচারীগণ (১০ম গ্রেড থেকে ২০ তম গ্রেড) ট্রেন পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ 

বিবৃতিতে বলা হয়, যেহেতু আপামর ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, সেহেতু নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রোর ক্ষেত্রেও গ্রেড ভিত্তিক সকল বৈষম্য দূর করে পুনরায় অতি দ্রুত নতুন উদ্যমে মেট্রো পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করে সম্মানিত যাত্রীদের চাহিদার প্রতিফলনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ডিএমটিসিএলে বিদ্যমান গ্রেড ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবি উপস্থাপন করা হচ্ছে—

১ /বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী ১-৯ম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেলের ২.৩ গুণ হারে এবং ১০-২০ তম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেলের ২.০ গুণ হারে প্রদান করা হচ্ছে। যা পরিবর্তন করে বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো অর্থাৎ সকল গ্রেডের একই রকম বেতন কাঠামো যা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ২.৩ গুণ হারে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ প্রদান করতে হবে। 

অর্থাৎ ডিএমটিসিএলে দুই ধরনের বেতন কাঠামো বিদ্যমান। ১-৯ম গ্রেডের জন্য এক রকম এবং ১০-২০ তম গ্রেডের জন্য অন্য রকম। যা দূর করে একই হারে বেতন কাঠামো প্রদান করতে হবে। 

২ /চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ সিপিএফ সুবিধা প্রদান করতে হবে। 

৩ /অন্যান্য সকল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ও অন্যান্য দেশের মেট্রোর সঙ্গে সমন্বয় করে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করণসহ সকল ধরনের ভাতাদি সংবলিত সার্ভিস রুল দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান করতে হবে। 

৪ /শিক্ষানবিশকাল শেষে অন্যান্য সকল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির ন্যায় যোগদানের তারিখ থেকে স্থায়ীকরণ (নিয়মিতকরণ) করতে হবে। 

৫ /স্টেশন ও ডিপোসহ সকল স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ডিউটি প্রদান করতে হবে। 

৬ /সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে স্বৈরাচারী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো বন্ধ করতে হবে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখিত দাবি বাস্তবায়নে গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ এর কর্মচারীরা গত ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। কিন্তু স্বেচ্ছাচারী, জুলুম, নির্যাতন ও বৈষম্যকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনোপ্রকার আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় এখনো আমরা কাজে ফিরতে পারছি না। আমরা অতি দ্রুত মেট্রো চালুর বিষয়ে বদ্ধ পরিকর।’ 

এদিকে গত সপ্তাহে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের মেট্রো চলাচল করার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নতুন সরকার গঠন হলে যিনি দায়িত্ব নেবেন তিনি যেভাবে বলবেন সেটাই হবে। 

এই কর্মকর্তা বলেছিলেন, চালু করার নির্দেশ দিলে ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে মেট্রোরেল চালু হবে। 

উল্লেখ্য, গত মাসের ১৮ জুলাই বিকেল ৫টায় বন্ধ হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। এরপরের দিন বিক্ষোভকারীরা মেট্রোরেল কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশনে ভাঙচুর চালায়। 

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই দুই স্টেশন ঠিক করতে ১ বছর সময় লাগবে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও চালু হয়নি মেট্রোরেল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে মেট্রোরেল চলাচল নিয়ে আর কোনো নতুন তথ্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত