Ajker Patrika

মাদারীপুরে আন্দোলনে নিহত তাওহীদ ও রোমানের লাশ উত্তোলনে দুই পরিবারের বাধা 

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৩
Thumbnail image

মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তাওহীদ সন্ন্যামাত ও রোমান বেপারী নিহতের ঘটনার মামলার পর লাশ ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলনে গেলে দুই পরিবারই আপত্তি জানান। পরে পরিবারের বাধার মুখে ফিরে আসেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈম সরকার মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের তাওহীত সন্ন্যামাতের কবর থেকে লাশ উত্তোলনে আসেন। এতে আপত্তি জানান পরিবারের সদস্যরা। বাধার মুখে ফিরে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যরা।

অপর দিকে মাদারীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা এলাকায় নিহত রোমান বেপারীর বাড়িতে যান। রোমান বেপারীর মা-বাবা কোনো অবস্থাতেই লাশ উত্তোলন করতে দেবে না বলে জানান। বাধার মুখে সেখান থেকেও ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসেন।

নিহত রোমানের মা রিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের লাশ কবর থেকে ওঠাতে দেব না। আমার ছেলে মারা গেছে, তাতে আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমাদের টাকা-পয়সা, কোনো কিছুই দরকার নেই।’

নিহত রোমানের বাবা ওমর আলী বেপারী বলেন, ‘এই লাশ কবর থেকে ওঠানো হলে, মা-বোন, সন্তানসহ অন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। কষ্টে আরেকটি দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই, প্রশাসনকে অনুরোধ করলে তারা বাড়ি থেকে চলে যান।’

নিহত তাওহীদের মা রেশমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু তাওহীদ মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে, এটা আমরা জানি না। তাই কবর থেকে লাশ ওঠাতে দেব না।’

নিহত তাওহীদের ভাই আসাদ সন্ন্যামাত বলেন, ‘ভাই হারিয়েছি। এখন তো আর ভাইকে ফিরে পাব না। লাশ কবর থেকে ওঠালে পুরো পরিবারে ভেঙে পড়বে। আমরা মামলার বাদী হলে বিষয়টি ভেবে দেখতাম। কিন্তু এখন কোনো অবস্থাতেই লাশ তুলতে দেব না।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বলেন, বিষয়টি আদালতে অবগত করা হবে। আদালতের সিদ্ধান্তেই নেওয়া হবে পরবর্তী ব্যবস্থা। পরিবারের অনুমতি না পেলে লাশ কবর থেকে উত্তোলনের কোনো সুযোগই নেই।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাঈম সরকার বলেন, তাওহীদ সন্ন্যামাতের পরিবারকে কয়েক ঘণ্টা বুঝিয়েও ব্যর্থ হয় প্রশাসন। পরে সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও আদালতের বিচারকের সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

madaripur-1উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগদী এলাকায় গুলিতে নিহত হন মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সালাউদ্দিন সন্ন্যামাতের ছেলে তাওহীদ সন্ন্যামাত (২১) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা গ্রামের ওমর আলী বেপারী ছেলে রোমান বেপারী (৩২)।

এই ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট নিহত পিকআপচালক রোমান বেপারীর স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

অপর দিকে নিহত রাজমিস্ত্রি তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যার ঘটনায় ২৫ আগস্ট মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব কামরুল হাসান বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন।

এই মামলার আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসন ও ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাদারীপুর-৩ আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান, শাজাহান খানের ছোট ভাই ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান, শাজাহান খানের আরেক ভাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খান যাচ্চু, মাদারীপুরের সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত