Ajker Patrika

স্টার সিনেপ্লেক্সের টিকিটের দাম

ন্যায্য ভাগাভাগিতে একমত দুই পক্ষ

  • টিকিটের মূল্য ভাগাভাগি নিয়ে চলচ্চিত্রের প্রযোজক-প্রদর্শকদের দ্বন্দ্ব পুরোনো
  • বিনিয়োগ উঠে আসা নিয়ে প্রযোজকের শঙ্কা
  • সিনেমা না চলা নিয়ে হতাশা প্রদর্শকের
  • অন্য প্রদর্শকদের সঙ্গেও সমঝোতার আশা
শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিনেমা হলের টিকিটের মূল্য ভাগাভাগি নিয়ে চলচ্চিত্রের প্রযোজক-প্রদর্শকদের দ্বন্দ্ব পুরোনো। সম্প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে টিকিটের লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা তৈরি হলে বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। শেষ পর্যন্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ মাল্টিপ্লেক্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রযোজকদের লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেল।

প্রযোজকদের বক্তব্য, দর্শকের দেওয়া টিকিটের মূল্যের একটা বড় অংশ সার্ভিস চার্জ ও সরকারি কর হিসেবে চলে যায়। শুধু প্রবেশমূল্যের অর্থের যে ভাগ প্রযোজক পান, তাতে তাঁর বিনিয়োগ উঠে আসা কঠিন।

অন্যদিকে প্রদর্শকদের যুক্তি, সিনেমা হল কিংবা সিনেপ্লেক্সভেদে খরচ আলাদা। তাই সার্ভিস চার্জও আলাদা। তা ছাড়া, সারা বছর সিনেমা হল প্রায় খালি পড়ে থাকে। বেশির ভাগ ছবিই তেমন ব্যবসা করতে পারে না। শুধু ঈদের ছবি দিয়ে বিনিয়োগকারী প্রযোজককে সারা বছরের ব্যয় পুষিয়ে নিতে হয়। সুতরাং শুধু ঈদের ব্যবসাকে মানদণ্ড ধরা বাস্তবসম্মত নয়।

এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্স ও প্রযোজকেরা ‘ন্যায্যতার ভিত্তিতে’ লভ্যাংশ ভাগাভাগি করার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। আলোচিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘দাগি’ ও ‘তাণ্ডব’ উপহার দেওয়া আলফা আই-এর কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল এ বিষয়ে জানালেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বললেন, ‘আমরা মনে করি, প্রযোজক ও প্রদর্শক পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়। আমাদের একসঙ্গেই কাজ করতে হবে।’

শাহরিয়ার শাকিলের কথায়, ‘প্রযোজক ও প্রদর্শকদের মধ্যে লভ্যাংশ ভাগের অনুপাত এখন ন্যায্যতার ভিত্তিতে হবে। আমরা স্টার সিনেপ্লেক্সকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা প্রায় ২১ প্রযোজকের একটি দল তাদের সঙ্গে বসেছি। ন্যায্যতার ভিত্তিতে লভ্যাংশ ভাগ হওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে।’

স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রযোজকদের সঙ্গে আয় ভাগাভাগির একটা বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। তবে তা যেহেতু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাই এখনই বিশদ প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

রাজধানীসহ সারা দেশে দিনে দিনে এক পর্দার সিনেমা হল কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে মাল্টিপ্লেক্স। স্টার সিনেপ্লেক্স দেশের অন্যতম মাল্টিপ্লেক্স। ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে স্টার সিনেপ্লেক্স প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বেশ কিছু শাখা।

সম্প্রতি একদল চলচ্চিত্র প্রযোজক স্টার সিনেপ্লেক্সের কাছে তাদের কয়েকটি দাবি নিয়ে চিঠি পাঠান। এর একটি দাবি ছিল টিকিটের মোট মূল্য থেকে সার্ভিস চার্জ কমিয়ে প্রবেশমূল্যের অনুপাত বেশি করা। কারণ প্রবেশমূল্যের অর্থই প্রদর্শক ও প্রযোজকের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। প্রযোজকদের সেই দলে ছিলেন শাহরিয়ার শাকিল, রেদওয়ান রনি, শাহরিন সুমী, জাহিদ হাসান, আবুল কালাম প্রমুখ।

স্টার সিনেপ্লেক্সের একটি টিকিটের মূল্য কীভাবে ভাগ হচ্ছে, তা বুঝতে এ প্রতিবেদক ৪ মে তারিখের একটি ৪০০ টাকার টিকিট খতিয়ে দেখেন। সেখানে দেখা যায় হল কর্তৃপক্ষ দর্শকের কাছ থেকে প্রবেশমূল্য ১৫৯, এসি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ১৪৮, ভ্যাট ৪৬ এবং পৌর কর বাবদ ৪৬ টাকা নিয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যয়ের পেছনেই টিকিটের দামের বড় অংশ চলে যাচ্ছে, যা সার্ভিস চার্জ হিসেবে শুধু হলের মালিক পেয়ে থাকেন।

স্টার সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে প্রযোজকদের সমঝোতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রদর্শক ও প্রযোজক উভয় পক্ষই। এর আদলে অন্যান্য সিনেপ্লেক্স কিংবা সিনেমা হলেও লভ্যাংশ ভাগাভাগি নিয়ে প্রযোজক ও প্রদর্শকদের মধ্যে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘শুধু ঈদের ছবি দিয়ে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা যায় না। ‘বরবাদ’ খুবই ভালো ছবি। এই ধরনের ছবি বছরজুড়ে থাকতে হবে। তাহলে প্রযোজক যেমন টিকে যাবেন, তেমনি প্রদর্শকেরাও সিনেমা হল বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো দুই ঈদ ছাড়া সারা বছর সিনেমা হলে চালানোর মতো ছবি থাকে না।’

চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য প্রদর্শক ও প্রযোজকের বন্ধন খুব জরুরি বলে মন্তব্য করেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘স্টার সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজক ও প্রদর্শকেরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে দুই পক্ষকে একসঙ্গে চলতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত