Ajker Patrika

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন, ২২ লাখ টাকা আদায়ের পর হত্যা 

নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

উন্নত জীবন গড়ার আশায় নুর আলমের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে পাড়ি জমানোর। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার জন্য বছরখানেক আগে একটি দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু টাকা নিয়ে দালালেরা ইতালির বদলে তাঁকে লিবিয়ায় নিয়ে একটি বাসায় আটকিয়ে রেখে নির্যাতন চালিয়ে দেশে থাকা তাঁর পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। 

তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও নুরের জীবন রক্ষা করতে পারেনি তাঁর পরিবার। পরিবারের অভিযোগ গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর থেকে লিবিয়ার একটি মর্গে পড়ে আছে তার নিথর দেহ। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবার মরিয়া হয়ে তদবির করেও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার অসহায় পরিবার। 

নুর আলম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের আবদুল হালিম মোল্লার ছেলে। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। নুর আলমের বড় ভাই সিরাজ মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাই নুর আলমকে ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্রের সদস্য পাশের বারখারদিয়া গ্রামের মোকছেম মোল্লার ছেলে মফিজ মোল্লা। তার সঙ্গে দালাল চক্রের সদস্য একই গ্রামের সিরাজ মুনশির ছেলে লিটন মুনশি, মাঝারদিয়া গ্রামের আনারদ্দীন মোল্লার ছেলে তোরাপ মোল্লা ও নগরকান্দা উপজেলার ধর্মদী গ্রামের খোরশেদ মোল্লার ছেলে মিজান মোল্লা রয়েছে। এরা সবাই লিবিয়ায় থাকেন।’ 

সিরাজ মোল্লা আরও বলেন, গত এক বছর দুই মাস আগে ইতালি নেওয়ার জন্য দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয় নুর আলম। দালাল চক্রের মূল হোতা মফিজ নুর আলমকে দেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে ৪ লাখ আর ইতালি পৌঁছে ৪ লাখ টাকা দিতে বলেন। তার কথামতো প্রথমে তাকে ৪ লাখ টাকা দেন নুর আলম। পরে নুর আলমকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। তাকে নিয়ে প্রথমে লিবিয়ার বেনগাজিতে একটি বাসায় রাখেন। ওখান থেকে নৌপথে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতালি না নিয়ে লিবিয়ায় একটি বাসায় দিনের পর দিন আটকে রেখে দালালেরা নির্মম নির্যাতন চালান আর দেশে থাকা পরিবারের কাছে ফোন করে দফায় দফায় টাকা পাঠাতে বলেন। 

সিরাজ মোল্লা আরও বলেন, ‘নুরকে বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে দালালেরা যখন যে অঙ্কে টাকা চেয়েছে, আমরা তাই পাঠিয়েছি। মোট ২২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। একপর্যায়ে নুর আলম দেশে ফেরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নুর আলম দেশে এসে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় তাঁকে প্রথমে বাধা দেওয়া হয়। পরে নুরকে আবারও মারধর এবং নির্যাতন শুরু করে দালালেরা। নুর আলম বারবার ফোনে ওদের নির্যাতনের কথা জানিয়ে বলেছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে, তোমরা আমাকে বাঁচাও। এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁরা নুর আলমকে হত্যা করে বাসায় ঝুলিয়ে রাখে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই দালালেরা আমাদের ফোন করে বলে নুর আত্মহত্যা করেছে।’ 

নুর আলমের ছেলে রাসু মোল্লা ও মেয়ে মিতু আক্তার বলে, ‘বাবাকে দালালেরা ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এর আগে বাবাকে বাঁচাতে দালালদের কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। এই টাকা দিতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের অল্প জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে ও ধারদেনা করে টাকা পাঠিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা ওই দালালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি। সেই সঙ্গে বাবার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’ 

মামলা করার বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজ মোল্লা বলেন, ‘আগে লাশ আনার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। লাশ দেশে আসার পর আইনের আশ্রয় নেব।’ 

এ বিষয় অভিযুক্ত দালালেরা লিবিয়ায় অবস্থান করায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। 

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, ‘নুর আলমের ঘটনাটি মাত্র জানতে পারলাম। নুরের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের সহযোগিতা লিখিতভাবে চায়। তাহলে আইন মোতাবেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত