Ajker Patrika

নিজের তৈরি কবরে শায়িত হতে পারলেন না সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ২৭
নিজের তৈরি কবরে শায়িত হতে পারলেন না সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন

নিজের তৈরি করে রেখে যাওয়া কবরে দাফন করা হয়নি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। এমনকি তাঁর মরদেহও আনা হয়নি পৈতৃক ভিটায়। স্ত্রী ও দুই মেয়ের সিদ্ধান্তে তাঁকে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে দাফন করা হয় শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে। 

এদিকে প্রিয় নেতার মরদেহ একনজর দেখার জন্য মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ডাসার এলাকার পৈতৃক ভিটায় হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। আজ বেলা ১১টার দিকে ডাসারবাসী জানতে পারেন সৈয়দ আবুল হোসেনকে আর পৈতৃক ভিটায় নিয়ে আসা হবে না। 

এই খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বুকফাটা আর্তনাদ আর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। পরে এলাকাবাসী ও নেতা-কর্মীরা ডাসার উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন। 

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের দাফন নিজ এলাকায় না হওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ বাদ জুমা মাদারীপুর ডাসারে নিজ প্রতিষ্ঠিত মসজিদে মাঠে সৈয়দ আবুল হোসেনের জানাজা হওয়ার কথা ছিল। তাই ভোর থেকেই নেতা-কর্মীরা ডাসারে আবুল হোসেনের পৈতৃক ভিটা ও মসজিদ মাঠে ভিড় করতে থাকেন। 

হঠাৎ বেলা ১১টার দিকে তাঁরা জানতে পারেন প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আসবে না। স্ত্রী খাজা নার্গিস হোসেন ও দুই মেয়ের সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেনের সিদ্ধান্তে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে। এতে মাদারীপুর-৩ (মাদারীপুর সদর একাংশ-কালকিনি-ডাসার উপজেলা) আসনে শোকের ছায়া নেমে আসে। 

সৈয়দ আবুল হোসেন নিজে গড়েছিলেন তাঁর কবর। পাশে তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। যাতে ব্যয় হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। সাত বছর আগে এই দুটি স্থাপনা তৈরি করেছেন তিনি। 

সৈয়দ আবুল হোসেনের মরদেহ পৈতৃক ভিটায় না আসায় কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকাডাসার উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে আমার ১৯৮৮ সাল থেকে পরিচয়। তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পৈতৃক ভিটায় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও নিজের হাতে কবর তৈরি করে রেখেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ও ইচ্ছে ছিল এই কবরে থাকার। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যরা তা হতে দিলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কিছুইতে এটা মানতে পারছি না।’ 

ডাসার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতাকে আমরা শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না। তাঁর পরিবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’ 

কালকিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁর পৈতৃক ভিটার তাঁর বাবা ও মায়ের কবরের পাশে নিজেই তাঁর কবর তৈরি করেছিলেন। অনেক টাকা ব্যয় করে কবরটি তৈরি করেছিলেন। এমনকি কী টাইলস হবে, কী কাঠ হবে সবকিছু তিনি ঠিকাদারকে বলেও রেখেছিলেন। ছয় মাস ধরে কবরটির উন্নয়নকাজও চলছিল। অথচ তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণ করলেন না।’ 

সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই ডা. সৈয়দ আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি আমার ভাইয়ের মরদেহ ডাসারে আনার জন্য। কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও তাঁর দুই মেয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে দাফন করা হয়েছে।’ 

সৈয়দ আবুল হোসেন নিজের জন্য তৈরি করা কবরের স্থান। ছবি: আজকের পত্রিকাকালকিনি উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা বহু চেষ্টা করেও আমাদের প্রিয় নেতার মরদেহ ডাসারে আনতে পারিনি। আমাদের নেতা-কর্মীরা সৈয়দ আবুল হোসেনকে একনজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর শ্বশুরবাড়িতে দাফন করা হয়েছে।’ 

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ আবুল হোসেন। ১৯৫১ সালে মাদারীপুরের ডাসারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে খাজা নার্গিস হোসেনকে বিয়ে করেন। সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেন এই দুই কন্যা থাকেন দেশের বাইরে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হোসেন। এরপর তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। 

 এ ছাড়া তিনি কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুর সদরে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে গেছেন। যার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে শেখ হাসিনা উইমেন্স কলেজ, ডিকে আতাহার আলী কলেজ, খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, এবিসি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, খাসেরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত