Ajker Patrika

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর ও পথসমাবেশ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ২৮
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর ও পথসমাবেশ

গায়ে মোড়ানো খবরের কাগজ। ক্যামেরা হাতে ছুটছেন সংবাদ সংগ্রহে। হঠাৎই কজন এসে ছুটে চলা সেই ব্যক্তিকে থামিয়ে তার আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধলেন স্কচটেপ। বাদ যায়নি ক্যামেরা ও কলম। মাথার ওপর শেকল বেঁধে গলায় ঝোলানো হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিকৃতি। এরপর দর্শক ও সাধারণ পথচারীদের সহায়তায় ছিঁড়ে ফেলা হলো সকল বাঁধন।—এভাবেই পারফরমেন্স আর্টের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়। 

আজ রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের পাঠচক্র গ্রুপ ‘অনুশীলন’ এর উদ্যোগে শহরের প্রেসক্লাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে পথ সমাবেশ পালিত হয়। শহরের সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে চলে এই কর্মসূচি। আলোচনা, গণস্বাক্ষর, পারফরমেন্স আর্ট এবং কবিতা আবৃতির মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয় আইনের অপব্যবহারের। 

পথ সমাবেশে আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম জীবন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সুজনের জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল, সমগীতের অমল আকাশ, প্রথম আলোর প্রতিনিধি মজিবুল হক পলাশ, সংবাদদাতা গোলাম রাব্বানী শিমুল, বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সাব্বির আল ফাহাদ, সাংস্কৃতিক কর্মী জহিরুল ইসলাম মিন্টু। সঞ্চালনায় ছিলেন দা ডেইলি স্টারের সৌরভ হোসেন সিয়াম ও আজকের পত্রিকার সাবিত আল হাসান। সভাপতিত্ব করেন অনুশীলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আফসানা আক্তার। 

মাথার ওপর শেকল বেঁধে গলায় ঝোলানো হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিকৃতিসাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বী বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু সাংবাদিক নেতা সকালে উত্তর দিকে যাচ্ছেন, বিকেলে যাচ্ছেন দক্ষিণ দিকে। দেশের অন্যান্য পেশাজীবীদের যেমন এক কাতারে দেখার সুযোগ নেই, তেমনি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও দেখতে হবে তার মস্তক অন্য কারও কাছে বন্ধক আছে কিনা। স্বাধীনতার সময় পাক সেনাদের সহযোগিতার জন্য রাজাকার গঠন করা হয়েছিল। সে সময় তৎকালীন ঢাবি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই রাজাকার গঠনের সমর্থন জানিয়েছিলেন। সুতরাং শিক্ষক হলেই তারা জাতির বিবেক এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। যেসব শিক্ষকেরা শাসকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে, এরা আমাদের দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না।’ 

গণস্বাক্ষর অংশ নেন শহরের সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক প্রতিনিধিরাআইন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা ছিল, সেই কারণেই আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে নির্বাচিত হতে পেরেছিল। আজকে মানুষের ভোটের স্বাধীনতা নেই, কথা বলা, লেখার স্বাধীনতা নেই। আইন দিয়ে মানুষের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই শাসক গোষ্ঠী গলা উঁচিয়ে বলছে দেশে নাকি কোনো ভিক্ষুক নেই। তাহলে স্বাধীন দেশে শিশুরা ফুল বিক্রি কেন করছে তা আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই। মনে রাখবেন, জনগণ সবকিছু জানে ও বুঝে। জনগণকে বোকা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এই আইনে যাদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার এই আইন বাতিল করতে হবে।’ 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে পথসমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়পথসভায় আলোচনা ছাড়াও ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করো’ শিরোনামে শিল্পী অমল আকাশ ও ‘চিৎকার’ শিরোনামে শিল্পী সুমনা আক্তার পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন ভবানী শংকর রায় ও ফারহানা মানিক মুনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত