Ajker Patrika

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সালিস বসিয়ে রিকশাচালককে জুতাপেটা

মো. বেলাল হোসাইন, শরীয়তপুর
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ২০
Thumbnail image

শরীয়তপুরে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সালিস বসিয়ে তিন সন্তানের জনক এক রিকশাচালককে জুতা পেটা করার অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ‘সালিস’ বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও ৩ অক্টোবর রাতে জাজিরা পৌরসভা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

৪৫ বছর বয়সী ওই রিকশাচালক পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় মুলনা তালুকদার কান্দর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁকে দোষী বানানো হয়েছে। খোকন তালুকদারসহ আরও কয়েকজন সালিসে বসে তাঁকে জুতা পেটা করেন।   

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয়রা জানান, ২ অক্টোবর দুপুরের দিকে ওই ঘটনা ঘটে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরী এক প্রতিবেশীর ঘরে ছিল। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে রিকশাচালক পালিয়ে যান। পরদিন রাতে খোকন তালুকদারসহ কয়েকজন ঘটনাটি নিয়ে সালিস বৈঠকে বসেন। সালিসে ওই কিশোরীর মায়ের কাছে মাফ চাওয়া ও ৫০টি জুতাপেটার সিদ্ধান্ত দেন তাঁরা। পরে মা রিকশাচালক ছেলেকে জুতা পেটা করেন।

এই অভিযোগে সালিস বসানোর কারণ জানতে চাইলে সালিসকারী খোকন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এলাকায় একটা ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে যাতে অশান্তি সৃষ্টি না হয়, সে কারণে এলাকার মুরব্বিরা বসে মীমাংসা করে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই কিশোরীর বাবা দুই মাস আগে মারা গেছেন। মা ছাড়া কিশোরীর কেউ নেই। মা-মেয়ে দুজনেই সরল টাইপের। তারা খুবই গরিব ও অসহায়। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় তাদের জীবন চলে। ঘটনার পর কিশোর ও তার মা লোকলজ্জার ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।’

কিশোরীর মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রিকশাচালক আমার মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এলাকার মাতব্বরেরা সালিস বৈঠক করে তার বিচার করেছে। তারা তাকে আমার কাছে মাফ চাইতে বলছে এবং ৫০টি জুতাপেটার হুকুম দেয়। সালিসদের হুকুমে রিকশাচালকের মা রিকশাচালককে কোনো রকম হালকাভাবে জুতা দিয়ে কয়েকটি বাড়ি দিচ্ছে। তাদের এ বিচার আমাদের মনঃপূত হয় নাই। আমরা গরিব-অসহায় বলে থানায় গিয়ে মামলা করারও সামর্থ্য নাই।’ 

রিকশাচালক বলেন, ‘আমি ওই ঘরে তাস রেখেছিলাম। তাস আনতে ওই ঘরে গিয়ে দেখি সেখানে মেয়েটি। তখন আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাই। পরে এলাকার লোকজন আমার বিরুদ্ধে বদনাম রটায়, আমি নাকি ওই মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করতে গেছি। পরে এলাকার লোকজন সালিস বৈঠক করে এর বিচার করেছে। আমার মা আমাকে জুতা দিয়ে বাড়ি মেরেছে। আমি দোষ না করলেও এখন আমি দোষী। তাই আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি। এ বিষয়ে আমার কোনো অভিযোগ নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত