Ajker Patrika

স্ত্রীর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ, ৬ জন গ্রেপ্তার

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
স্ত্রীর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ, ৬ জন গ্রেপ্তার

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে অপহরণের অভিযোগে অপহরণকারী দলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে সাটুরিয়া থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত চক্রটি ‘আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’র নামের একটি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচয় দিয়ে গ্রাম-গঞ্জ থেকে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকদের তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের জেরে তাঁর স্বামীকে অপহরণ করিয়েছেন। 

এ ঘটনায় গত শনিবার ভুক্তভোগীর বাবা থানায় একটি অভিযোগ দেন। অপহরণের শিকার ভুক্তভোগী মো. রেজাউল করিম। সাটুরিয়া উপজেলার আয়নাপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রেজাউল করিমের স্ত্রী তানিয়া। 

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম মিঠু, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বোরাইজ গ্রামের নাসির আহম্মেদ, গাজীপুরের আবুল কাইয়ুম, গেন্ডা সাভারের শহিদুল হক দিপু, চানখাঁরপুলের সাজিদ হাসান বাবু ও রাজাসনের আবদুল হাকিম। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে এ আসামি রয়েছেন। 

থানা-পুলিশ বলছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাটুরিয়া উপজেলার আয়নাপুর গ্রামের মো. রেজাউল করিমকে নেশাগ্রস্ত অপবাদ দিয়ে সাভারের কথিত আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচয় দিয়ে, স্থানীয় বাশার মেম্বারের বাড়ির সামনে থেকে একটি সাদা রঙের গাড়িতে তুলে নিয়ে অপহরণ করা হয়। 

অপহরণের শিকার ভুক্তভোগী রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার স্ত্রীর তানিয়া আক্তারের মোবাইল দিয়ে ওই অভিযুক্তদের একজন আমাকে ফোন করে তিল্লি বাজারে যেতে বলে। আমি তাঁর কথামতো সেখানে গেলে বাশার মেম্বারের বাড়ির পাশ থেকে কোনো কিছু না বলেই আমাকে জোড়পূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর আমাকে মারধর করতে থাকে। ‘আমি রোজা রেখেছি, আমাকে আর মারবেন না’ এ কথা বলার পর সিগারেট ধরিয়ে আমাকে খেতে বলে তাঁরা। আমি রোজা রেখেছি বললেও ওরা আমাকে মারপিট করে। এরপর মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’ 

রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘আমাকে সাভারের ব্যাংক কলোনিতে নেওয়ার পর গরম পানি দিয়ে ১ ঘণ্টা গোসল করায়। এরপর মেডিসিনযুক্ত খাবার দেয়। সে খাবার খেয়ে আমি বমি করি। এরপর আমাকে গাঁজা ইয়াবাসহ সব ধরনের নেশা করতে বলে। আমি নেশা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় তাঁরা।’ 

মামলার বাদী রেজাউলের বাবা মো. বহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে ধূমপান করে না। সে কোনো ধরনের সিগারেট খায় না। আগামী ৭ মে ওর বিদেশ যাওয়া কথা। বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে আমার ছেলের স্ত্রী তানিয়া ও তাঁর মা বাতাসী বেগম সাভার থেকে একটি ভুয়া রিহ্যাব সেন্টার দেখিয়ে সন্ত্রাসী ভাড়া করে আমার ছেলেকে অপহরণ করায়। ছেলে রেজাউলকে না পেয়ে সাটুরিয়া থানায় বিষয়টি জানাই।’ 

এদিকে ‘আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’র পরিচালক ও অভিযুক্ত মো. আতিকুর ইসলাম মিঠু বলেন, ‘গত শুক্রবার রেজাউলের স্ত্রী তানিয়া তাঁর স্বামীকে মাদকাসক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করবেন বলে ফরমে স্বাক্ষর করে ভর্তি করেন। এরপর আমরা ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে রেজাউলকে কেন্দ্রে নিয়ে আসি।’ 

এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর বাবার অভিযোগ পেয়ে ওই দিন রাতেই সাটুরিয়া থানার একটি দল সাভারে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী দলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারসহ ওই ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভুক্তভোগী রেজাউলের স্ত্রী তানিয়া ও তাঁর মা বাতাসী বেগম গ্রেপ্তারকৃতদের দিয়ে অপহরণ করিয়ে থাকতে পারেন। রেজাউলের স্ত্রী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কথিত ওই ‘আমার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’ চিকিৎসা সেবার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।’ 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত