Ajker Patrika

পটিয়ার ওসি প্রত্যাহারে বৈষম্যবিরোধীদের আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ২২: ৩৯
অবরোধ প্রত্যাহারের আগে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান বৈষম্যবিরোধীদের। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবরোধ প্রত্যাহারের আগে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান বৈষম্যবিরোধীদের। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও থানা-পুলিশের মধ্যে সংঘটিত হাঙ্গামার ঘটনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আট ঘণ্টা এবং নগরের খুলশী এলাকার ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে জাকির হোসেন সড়কে আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধীরা। দুই জায়গায় অবরোধের কারণে মানুষকে বেশ ভোগান্তিতে পরতে হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁরা রাস্তা থেকে সরে যান। এরপর যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

ছাত্রদের লাঠিপেটার অভিযোগে পটিয়া থানার ওসিকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক আট ঘণ্টা অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পটিয়া থানার গেটে অবস্থান নিলেও বেলা ১২টার দিকে তাঁরা ইন্দ্রপুল এলাকায় মহাসড়কে নেমে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।

এতে যোগ দেন কেন্দ্রীয় নেতা খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ চট্টগ্রাম জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা। সড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শত শত যানবাহন আটকা পড়ে, যাত্রীদের—বিশেষ করে নারী, শিশু, বয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের—চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বিকেল সোয়া ৬টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ঘোষণা দেন—দাবি পূরণ না হলে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রামজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সহযোগিতা করেন।

এর আগে বিকেল আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

ছাত্রদের ভাষ্য, পটিয়া থানা চত্বরে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। এতে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন আশরাফুল ইসলাম তৌকির (২১), মো. নাদিম (২১), মো. আয়াস (১৬), মো. আকিল (১৮), মো. ইরফান উদ্দিন (১৮), তাসরিয়ান হাসান (১৮), মো. রায়হান উদ্দিন (২০), সাইফুল ইসলাম (১৭), জাহেদুল করিম শাহী (১৮), মুনতাসির আহমদ (১৭) ও সাইফুল ইসলাম (১৮)। এদের মধ্যে কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজ, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। দীপঙ্কর দে নামের রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের এক নেতাকে পটিয়ায় আটক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তাঁরা দীপঙ্করকে মারতে মারতে থানার ভেতরে নিয়ে যান। এ সময় থানার লকআপে সাতজন রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। তবে দীপঙ্করের নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশের ভাষ্য, রাঙামাটিতে মামলা থাকলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়, যা একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ জানায়, থানা চত্বরে, গেট ও অভ্যর্থনা কক্ষে হামলা চালানো হয়।

এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১২টার দিকে আরও আন্দোলনকারী থানার সামনে জড়ো হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ডিবি পুলিশের একটি দল গিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তালহা রহমান বলেন, “আমরা বারবার তথ্য দিয়েও পুলিশকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। এবার যখন এক ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে থানায় নিয়ে যাই, তখন পুলিশ উল্টো আমাদের ওপরই চড়াও হয়। ”

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জায়েদ নূর বলেন, “একজন ছেলেকে মারতে মারতে থানার ভেতরে ঢোকার পর আমাদের একজন অফিসার তাঁদের থামাতে গেলে তাঁরা কিছুই শুনছিলেন না। স্লোগান দিতে দিতে ফোর্সের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। সিকিউরিটি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছিল। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।’’

ওসি জানান, রাত ১২টার দিকে তাঁরা আবার থানায় ঢোকার চেষ্টা করলে অতিরিক্ত ফোর্স আনতে হয়। দীপঙ্কর দে-কে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গেটে দায়িত্বরত সেন্ট্রিকে থামাতে গেলে ধাক্কাধাক্কি হয়। সেখানে একটি গ্লাস ভাঙচুর হয়।

ওসি বলেন, ‘‘ওই সময় হাজতে থাকা সাতজন রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামির কেউ পালিয়ে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ছাত্ররা মব তৈরি করে থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন। এতে চারজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। ”

ছাত্রলীগ দাবি করা ওই ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে ওসি বলেন, “তাকে আটক করে হাজতে রাখা হয়েছে।”

এদিকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর নগরের জাকির হোসেন সড়ক ছেড়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ কার্যালয় থেকে নেমে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। নেতা-কর্মীরা পটিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও থানার ওসির অপসারণসহ কয়েকটি দাবি জানান। ডিআইজি ওসিকে সরানোর আশ্বাস দিলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যান।

পটিয়ার সড়ক অবরোধ প্রত্যাহারের সময় ছাত্র নেতারা ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ১০টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহার করা না হলে চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার বলেন, “ছাত্রদের দাবিগুলো শোনা হয়েছে। পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এএসপি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।”

এর আগে বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে ডিআইজি কার্যালয়ে আসেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ডিআইজিকে নিচে নেমে কথা বলার আহ্বান জানান। তবে ডিআইজি পাঁচজন প্রতিনিধিকে কার্যালয়ে ডেকে নেন।

পরে আন্দোলনকারীরা খুলশী ৪ নম্বর সড়ক থেকে জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান নেন। এতে একেখান–জিইসি মুখী শত শত গাড়ি খুলশী থানার সামনে আটকা পড়ে। জিইসি থেকে একেখানমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অফিস ছুটির আগমুহূর্তে এমন কর্মসূচিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ।

এ বিষয়ে এনসিপি চট্টগ্রামের সংগঠক জোবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, “পটিয়া থানার ওসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও এএসপির প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। ডিআইজি মহোদয় আমাদের দাবি শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত