Ajker Patrika

শ্রীমদ্দির বাঁশের বাঁশি যাচ্ছে দেশের বাইরে

কামাল হোসেন সরকার, হোমনা
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৭
শ্রীমদ্দির বাঁশের বাঁশি যাচ্ছে দেশের বাইরে

হোমনা পৌরসভায় অবস্থিত উপজেলার সবচেয়ে বড় গ্রাম শ্রীমদ্দি। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত শ্রীমদ্দি গ্রামটি সারা দেশে বাঁশির গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। সারা বছর ধরেই এখানকার কারিগরেরা বাঁশি তৈরি করেন। তবে তাঁদের উৎপাদন ও বিক্রির প্রধান উদ্দেশ্য থাকে বৈশাখ মাস।

বাঁশির কারিগরেরা জানান, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরে বসে থেকেছেন বাঁশির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। অভাব-অনটনে থেকে অনেকেই এই পেশা ছেড়েও গেছেন। অথচ শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশের বাঁশির সুখ্যাতি দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে। 

গ্রামের বাঁশির প্রবীণ কারিগর আবুল কাশেম জানান, বাঁশির কারিগরদের এটি বংশপরম্পরার পেশা। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গ্রামে বাঁশি তৈরি হচ্ছে। শ্রীমদ্দি গ্রাম থেকে ১৬ ধরনের বাঁশি সারা দেশে যায়। করোনাকালীন লোকসান পুষিয়ে নিতে কারিগরেরা আবারও বাঁশি তৈরিতে মেতেছেন। আশা করছি দীর্ঘদিন পর হলেও কিছুটা গতি আসবে ব্যবসায়। 

সরেজমিন শ্রীমদ্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাঁশির কারিগরেরা। প্রতিটি বাড়িতেই নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করছেন। কেউ কয়লার আগুনে লোহা গরম করছেন। কেউ বা ওই লোহা দিয়ে বাঁশি ছিদ্র করছেন। কেউ বাঁশিতে তুলির আঁচড় দিচ্ছেন। আবার কেউ গুনে গুনে বস্তায় ভরছেন। 

গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আইনজীবী আজিজুর রহমান মোল্লা জানান, একসময় এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই পেশা ছিল বাঁশের বাঁশি তৈরি করা। বর্তমানে ৩০টি পরিবার এই শিল্পকে ধরে রেখেছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে তারা সরু মুলি বাঁশ কিনে আনেন। প্রথমে এ বাঁশ রোদে শুকানো হয়। এরপর বিভিন্ন ধরনের বাঁশির উপযোগী বাঁশগুলো বাছাই করে বেছে মসৃণ করে মাপ অনুসারে কাটতে হয়। মোহনবাঁশি, নাগিনবাঁশি, মুখবাঁশি, আড়বাঁশিসহ নানা ধরনের বাঁশি তৈরি করেন কারিগরেরা। এসব বাঁশির দাম ডিজাইন ও গুণাগুণভেদে ৫ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। 

বাঁশির কারিগর যতীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস বেশ গর্বের সঙ্গেই জানান, শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে জাপান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, নেদারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এই রপ্তানিতে সহায়তা করে। তবে বাঁশ আনা-নেওয়ার খরচ এবং কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হচ্ছে না। 

গ্রামের অশীতিপর বাঁশির কারিগর সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে এই শিল্প ধরে রেখেছি। কিন্তু এর জন্য কাঁচামাল আনা ও বাঁশি বিক্রির জন্য মেলায় নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশি হয়রানির স্বীকার হতে হয়। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে এসব হয়রানি বন্ধ ও সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করছি।’ 

বাঁশির কারিগর যামিনী মোহন বিশ্বাস জানান, এই গ্রামের বাঁশিশিল্প দেশের জন্য একটা ঐতিহ্য। সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে শিল্পটি বিলীন হতে সময় লাগবে না। 

এ বিষয়ে পৌর মেয়র আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম জানান, যুগ যুগ ধরে শ্রীমদ্দি গ্রামের বাসিন্দারা বাঁশি তৈরি করে আসছেন। আর্থিক সহায়তাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে গরিব কারুশিল্পীরা উপকৃত হবেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে জানান, শ্রীমদ্দি গ্রামের শত বছরের ঐতিহ্য বাঁশিশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত