Ajker Patrika

উৎপাদন বন্ধ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ চাঁদপুরবাসী

রহিম বাদশা, চাঁদপুর 
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ১২: ১৫
উৎপাদন বন্ধ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ চাঁদপুরবাসী

হাঁসফাঁস গরমে বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ চাঁদপুরবাসী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুতের সংকট এতটা প্রকট হয়নি চাঁদপুরে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশ সরবরাহ পেলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাচ্ছে অর্ধেকের মতো। গত তিন দিন ধরে বিদ্যুতের এই ঘনঘন আসা-যাওয়া লক্ষ করা গেলেও শিগগির এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ।

গত কয়েক দিন ধরে চাঁদপুর শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। তবে গত রোববার থেকে চাঁদপুর শহরে অস্বাভাবিক হারে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং পালাক্রমে হচ্ছে। একেক দফায় আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত থাকছে না বিদ্যুৎ।

আজ মঙ্গলবারও এই ধারা অব্যাহত ছিল। সম্প্রতি গরম বাড়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অফিস, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না লোকজন।

জেলার অন্যান্য উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে টানা কয়েক ঘণ্টা করে থাকছে না বিদ্যুৎ। গত শনিবার বিকেল থেকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে। চাহিদার অনুপাতে অর্ধেকেরও কম বরাদ্দ পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সমিতির কর্তাব্যক্তিরা।

চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়ার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পালাক্রমে লোডশেডিং করা হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা পরপর। বিশেষ করে রাতের বেলায়ও একাধিকবার দীর্ঘ সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হচ্ছে গত তিন দিন ধরে। এতে শিশু ও বয়স্ক মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। লোডশেডিংয়ের সময় গরমে ঘুমাতেও পারছি না। ভ্যাপসা গরমে ঘরেও টেকা যায় না।

শহরের হাজী মুহসীন রোডের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক টেকনিশিয়ান জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে এক্স-রেসহ অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল টেস্ট বন্ধ থাকছে। এতে রোগী ও সঙ্গে আসা স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শাহরাস্তি পৌর এলাকার আলমগীর হোসেন জানান, গত তিন দিন ধরে এক ঘণ্টা পরপর পালাক্রমে দিনে-রাতে লোডশেডিং করা হচ্ছে। কখনো কখনো এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকার পর দেড়-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে টানা দুই-তিন ঘণ্টা করেও লোডশেডিং করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, শহরে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা দিনের বেলা ১৮ মেগাওয়াট ও রাতে ২২ মেগাওয়াট। আমরা চাহিদামতো বিদ্যুৎ পেয়ে আসছিলাম। তবে গত তিন দিন ধরে চাহিদার চেয়ে কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। রোববার দিনে ১১ মেগাওয়াট ও রাতে ১৪ মেগাওয়াট পেয়েছি। সোমবার দিনে পেয়েছি ১২ মেগাওয়াট আর রাতে ১৪ মেগাওয়াট। এ কারণে বাধ্য হয়ে পালাক্রমে বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, মূলত গ্যাস ও জ্বালানির সংকটের কারণে সারা দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেছে। চাঁদপুর শহরে অবস্থিত ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও প্রায় পক্ষকালব্যাপী বন্ধ রয়েছে গ্যাসের সংকটের কারণে। তবে ডাকাতিয়ার অপর প্রান্তে ইচলী এলাকার ‘চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড’ নামের প্রাইভেট বিদ্যুৎকেন্দ্রে অল্প পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত করতে না পারলেও ঈদের আগে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের জোগান বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় দুটি সমিতির মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। দুই সমিতি মিলে প্রতিদিন ১২৫ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট। এ কারণে আগের চেয়ে লোডশেডিং বেড়ে গেছে।

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার দেব কুমার জানান, বর্তমান সময়ে তাঁর সমিতির আওতায় পিক আওয়ারে ৮০ মেগাওয়াট ও অফ পিক আওয়ারে ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সেই অনুপাতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে অনেক কম। গতকাল সোমবার জাতীয় গ্রিড থেকে পিক আওয়ারে ৪৫ ও অফ পিকে ৩০-৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। সরবরাহ ব্যাপক হারে না বাড়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত