Ajker Patrika

জনবল, যন্ত্রপাতি সংকট ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

  • ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চলছে ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে
  • ৩০৬টি পদের বিপরীতে জনবল রয়েছে ২০৬ জন, অতিরিক্ত রোগীর চাপ
ফেনী প্রতিনিধি
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

নানা সমস্যায় জর্জরিত ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যা হলেও এখনো ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রটি। পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের জেনারেটর, টেলিফোন সংযোগ, লিফট সেবা ও সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৩০৬টি পদের বিপরীতে জনবল আছে ২০৬ জন। হাসপাতালটিতে ৯ জন জ্যেষ্ঠ কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৫ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ১২ জনের জায়গায় আছেন ৬ জন। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, শিশু রোগ, রেডিওলজি, প্যাথলজি, সার্জারি, দন্ত্য, চক্ষু, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই হাসপাতালটিতে। বিশেষায়িত সেবা, ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, সিসিইউ ও থেরাপি বিভাগের জন্যও নির্দিষ্ট জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ১৫৩ সেবিকা পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩২টি, ৪২ অফিস সহায়ক (তৃতীয় শ্রেণি) পদের মধ্যে শূন্য ১৬টি, চতুর্থ শ্রেণির পদে ৭৩ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ১৬ জন।

সরেজমিনে ১৯ জানুয়ারি সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিবিভাগ ও জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। বহির্বিভাগে সহস্রাধিক সেবাপ্রত্যাশীকে সেবা দিচ্ছেন ৭ জন মেডিকেল অফিসার। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে দেখা গেছে রোগীদের দীর্ঘ সারি।

অভিযোগ রয়েছে, কয়েক বছরেও ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান বাড়েনি। এমনকি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর চিকিৎসকেরাও অনিয়মিত, নার্সের সংখ্যা কম। রয়েছে কর্মচারী-সংকট। দন্ত্যসেবা, চর্ম চিকিৎসাসহ অনেক রোগের পরীক্ষা করানো যায় না হাসপাতালে। প্রায় সময় মেশিন নষ্ট কিংবা অপারেটর নেই শুনে ফিরে যেতে হয় রোগীদের।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজি বলেন, চিকিৎসক ঘাটতি পূরণে সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল থেকে অ্যাটাচমেন্ট (প্রেষণ) ডাক্তার আনতে হয়। তাঁদেরও বেশি দিন রাখা যায় না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও গত ৮ মাস তাঁদের বেতন বন্ধ হয়ে আছে, এজন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে কাজ বন্ধ রাখেন।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অবকাঠামো, জনবল ও চাহিদামাফিক যন্ত্রপাতি পেলে সেবার মান আরও বেগবান করা যাবে। সীমাবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফেনীর ৬ উপজেলার মানুষ এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে ২৫০ শয্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের একমাত্র লিফট নষ্ট হয়ে আছে। লিফটের অভাবে রোগী ওঠানামা করতে কষ্ট হয। এটি মেরামত ও নতুন লিফট স্থাপনের জন্য বারবার লিখেও কোনো সমাধান মেলেনি।

হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জিতু বলেন, ‘অবকাঠামো উন্নয়নের বরাদ্দ না পেলে আমরা কাজ করতে পারি না। রুটিন কাজের অংশ হিসেবে যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ চলমান লয়েছে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের নষ্ট হয়ে যাওয়া জেনারেটর মেরামতের জন্য মেকানিক পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, দুয়েক দিনের মধ্যে জেনারেটর সচল হয়ে যাবে।’

মনিরুজ্জামান জিতু বলেন, সিসি ক্যামেরাগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়নে লাগিয়েছিল। সেগুলো মেরামত বা নতুন স্থাপনের বরাদ্দ পেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া পুরোনো লিফট সংস্কার ও নতুন লিফট স্থাপনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। জরুরি বিভাগ প্রশস্তকরণের জন্যও চাহিদাপত্র পাঠানো আছে। বরাদ্দ পেলে জরুরি বিভাগ সম্প্রসারণের কাজ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত