Ajker Patrika

জাঙ্গালিয়ার দুর্ঘটনা

আরাধ্যর মতো প্রেমাও একা, বড়ই একা

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ২২: ৫৩
হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ঢাকার মিরপুরের তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ঢাকার মিরপুরের তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাত বছরের শিশু আরাধ্য বিশ্বাস; ১৮ বছরের কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা এবং আরাধ্যর মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস (১৮)—তিনজনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত তাঁরা। ওই দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ওই দুর্ঘটনায় আরাধ্য বিশ্বাসের মা সাধনা বিশ্বাস ও বাবা দিলীপ বিশ্বাস মারা গেছেন। একইভাবে ঢাকার মিরপুরের তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা হারিয়েছেন তাঁর মা লুৎফুন নাহার সুমি (৩৫), বাবা রফিকুল ইসলাম শামীম (৪৬), দুই বোন আনিশা আক্তার (১৪) ও লিয়ানা (৮), ফুফাতো বোন তানিফা ইয়াসমিন (১৬) এবং দাদা (শামীমের মামা) মুক্তার হোসেনকে (৬০)। আরাধ্যর মতো প্রেমাও এখন একা, বড় একা—হাসপাতালের আইসিইউতে, পৃথিবীতে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, একটি শয্যায় ঘুমিয়ে রয়েছে শিশু আরাধ্য। তার দুই পায়ে প্লাস্টার। পা দুটো টানা দেওয়া। হাতে পুশ করা স্যালাইন। দুর্ঘটনার ব্যথার সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্যানুলার ব্যথাও। পাশে বসে তার দেখভাল করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এখনো শঙ্কামুক্ত নয় শিশুটি (আরাধ্য)। পরে দুপুরে তাকে নেওয়া হয় আইসিইউতে।

আর আগে থেকেই আইসিইউতে লড়ছেন কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা।

এদিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আরাধ্যর বিপরীত পাশের একটি শয্যায় চিকিৎসাধীন তার মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস। তাঁর বাঁ হাত ও ডান পায়ে বড় ধরনের চিড়। মাথায় আঘাত রয়েছে। কুষ্টিয়ার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দুর্জয়।

চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, আরাধ্য ও প্রেমার অবস্থা ভালো নয়। আরাধ্য গত বুধবার কথা বলেছিল, কিন্তু বৃহস্পতিবার কোনো কথা বলেনি। তবে ডাকলে সাড়া দিচ্ছে। আর প্রেমার অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল। এখনো অপরিবর্তিত। দুর্জয়ও শঙ্কামুক্ত নন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলীম উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আহতদের মধ্যে আরাধ্য ও প্রেমার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। তাদেরকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। আরাধ্যর হাড় (পায়ের) ভেঙে গেছে। মাথায়ও আঘাত রয়েছে। আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।’

পরিচালক আরও বলেন, একজন স্বাভাবিক মানুষ যেভাবে রেসপন্স করে, আরাধ্য তার চেয়ে অর্ধেক রেসপন্স করছে। তবে ডাকলে সাড়া দিচ্ছে।

চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা বলেন, আরাধ্যর দুই পা ভেঙে গেছে। মাথায়ও আঘাত পেয়েছে। আর দুর্জয়ের হাত ও পা ভেঙেছে। সাত দিন পর পরবর্তী অবস্থা জানা যাবে।

দুর্ঘটনার খবর শুনে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে আসা আরাধ্যর কাকা অসিত কুমার জানান, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে আরাধ্যকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আরাধ্যর চিকিৎসা আপাতত চট্টগ্রামে চলবে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনা পুরো পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে।

এ দিকে সকালে আইসিইউর সামনে কথা হয় প্রেমার ছোট মামি জেসমিন রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খুবই খারাপ অবস্থা ভাগনির। ঢাকায় যে নিয়ে যাব, সে অবস্থাও নেই। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে এখনো সাড়া দেয়নি। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁরা দোয়া করতে বলেছেন। আমাদের চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার।’

অন্যদিকে হাসপাতালে আরাধ্যর মামা বিধান মন্ডল বলেন, আরাধ্যর মা-বাবার লাশ নিয়ে যাওয়া এবং আরাধ্যর চিকিৎসার জন্য তাঁকে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে।

গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়ায় বাস ও দুটি মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে দুই দম্পতিসহ ১০ জন নিহত হন। ঘটনাস্থলে মারা যান আরাধ্যর মা-বাবা।

নিহত ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভরঞ্জন চাকমা জানান, এর মধ্যে একই পরিবারের ছয় সদস্য রয়েছেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন—ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকার দিলীপ বিশ্বাস (৪৩) ও তাঁর স্ত্রী সাধনা মন্ডল (৩৭), সাধনার বড় ভাই আশীষ মন্ডল (৫০), ঢাকার মিরপুরের রফিকুল ইসলাম শামীম (৪৬) ও তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি (৩৫), বড় মেয়ে আনিশা আক্তার (১৬), ছোট মেয়ে লিয়ানা (০৮), ভাগনি তানিফা ইয়াসমিন (১৬), মামা মুক্তার হোসেন (৬০) এবং মাইক্রোবাসের চালক ইউসুফ আলী (৫৫)। তাঁদের মধ্যে আশীষ ও আনিশার মৃত্যু হয়েছে চমেক হাসপাতালে।

বুধবার বিকেলে জাঙ্গালিয়ার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় উপদেষ্টা সেখানকার সড়কের অসংগতি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।

এরপর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চমেক হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় তাঁরা আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত