Ajker Patrika

উত্ত্যক্তকারী শিক্ষককে হাতেনাতে ধরে পিটুনি, মুচলেকা দিয়ে মুক্তি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ২০: ২৪
Thumbnail image

কক্সবাজারের এক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষককে হাতেনাতে ধরতে সহপাঠীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন ওই ছাত্রী। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষককে হাতেনাতে আটক করে মারধর করেন সহপাঠীরা। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। 

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ হোছাইন। তিনি রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। 

কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার কলেজে ৭ মার্চের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কবিতা চত্বর এলাকায় যান। সেখানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মোবাইলে যেতে বলেন। এ খবরটি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানায়। পরে ঝাউবাগানের ভেতর থেকে ভুক্তভোগীর ১৫-২০ জন সহপাঠী মোহাম্মদ হোছাইনকে ধরে কক্সবাজার আদালত পাড়ায় আইনজীবী মোহাম্মদ রেজাউল করিম কাজলের চেম্বারে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ওই ছাত্রীর মা বাবাও আসেন। 

রেজাউল করিম বলেন, ‘২০-২৫ জন কলেজ শিক্ষার্থী রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইনকে নিয়ে আমার চেম্বারে এসে অভিযোগের কথা জানায়। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এবং ভুক্তভোগীর বাবা-মা আইনি পদক্ষেপ নিতে অনীহা প্রকাশ করায় আমি এ বিষয়ে বাইরে গিয়ে সমাধানের পরামর্শ দিই। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প লিখিত অঙ্গীকারনামা নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হয়।’ 

মুচলেকায় শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইন ভবিষ্যতে ভুক্তভোগী ছাত্রী কিংবা অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। অঙ্গীকারনামায় তিনি লিখেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি ভুল স্বীকার করছি।’ 

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলে, ‘১০–১২ দিন আগে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে একই অটোরিকশায় স্যারও ওঠেন। স্যার আমার মোবাইল নম্বর নেন। এরপর থেকে প্রায় সময় স্যার ফোন ও ভিডিও কল দিয়ে আমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন। বিষয়টি সহপাঠী ও মা-বাবাকে জানাই। পরে সহপাঠীদের পরিকল্পনা করে স্যারের মুখোশ উন্মোচন করি।’ 

ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘শিক্ষক হোছাইনের এ ধরনের আচরণের বিষয়ে সে (মেয়ে) আমাদের এবং তার সহপাঠীদের জানিয়েছিল। মেয়ের সবদিক বিবেচনা করে বিষয়টি নিয়ে বেশি দূর এগোয়নি। তবে এ ধরনের শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’ 

ওই ছাত্রীর এক সহপাঠী জানায়, ‘কবিতা চত্বরে স্যারের কথা মতো ভুক্তভোগী ছাত্রী গেলে স্যার তাকে কলেজ পোশাক পরিবর্তনের জন্য বলে। ভুক্তভোগী পোশাক পরিবর্তনের নাম করে শিক্ষককে মোটেল শৈবালের সুইমিংপুলের দিকে নিয়ে যায় এবং তাকে বাইরে রেখে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর সে আমাদের এবং তার মা-বাবাকে খবর দিলে আমরা এসে শিক্ষক হোছাইনকে হাতেনাতে ধরে ফেলি।’ 

এ সময় উত্তেজিত সহপাঠীরা তাঁকে মারধর এবং টানা হিঁচড়া করেন। এতে ওই শিক্ষক মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান। 

অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ হোছাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি বলে জানান। 

এ বিষয়ে রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুজিবুল আলম বিষয়টি তিনি শুনেছেন জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এর আগে, গত ১১ অক্টোবর কলেজের উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আইসিটি শিক্ষিকা আকতার জাহানকে অধ্যক্ষের কক্ষে মারতে তেড়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ হোছাইনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আকতার জাহান রামু থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে জাহানের কাছ থেকে মোহাম্মদ হোছাইন আকতার ক্ষমা চেয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়ে থানা থেকে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন বলে জানান আকতার জাহান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত