Ajker Patrika

৫ বছর ধরে ঝুলছে ভবন নির্মাণ, ভুগছে শিক্ষার্থীরা

রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি 
২ বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছরে হয়নি খাগড়াছড়ির রামগড় গনিয়াতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
২ বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছরে হয়নি খাগড়াছড়ির রামগড় গনিয়াতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রডে মরচে ধরেছে, কাঠের বাটাম পচে যাওয়ার অবস্থা—খাগড়াছড়ির রামগড় গনিয়াতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার নির্মাণাধীন ভবনের অবস্থা এমনই। জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। দুই বছরে কাজ সম্পন্ন হবে বলা হলেও পাঁচ বছরে ভবনটির অর্ধেকের বেশি অসম্পূর্ণ।

১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রামগড় গনিয়াতুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসায় বর্তমানে ১ হাজার ১০০-এর বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শ্রেণিকক্ষের সংকটে শিক্ষার্থীরা টিনশেডের নিচে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

২০২০ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দে চারতলা একটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের তিনতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হলেও চতুর্থ তলার কাজ এখনো শুরু হয়নি। ছাদ ঢালাইয়ের জন্য কিছু প্রস্তুতি নিলেও দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় রডের ওপর জমে গেছে পানি, পড়েছে মরচে। কাঠের বাটাম ভেঙে পড়ার মতো নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। অথচ এই স্তরে ছাদ ঢালাইয়ের কথা বহু আগেই নির্ধারিত ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চতুর্থ তলার কাজ শুরু করার আগে থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ইউ টি মং কনস্ট্রাকশন’-এর মালিকের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

যোগাযোগ করা হলে ইউ টি মং কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী ইউ টি মং জানান, কাজ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। ইট, বালু, মাটি সরবরাহসহ সবকিছুতেই ছিল সিন্ডিকেটের প্রভাব। মাদ্রাসার গলি দিয়ে মালামাল আনার সময় একটি গাইডওয়াল ভেঙে পড়ে, যা পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছে। এতে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়।

ইউ টি মং অভিযোগ করেন, নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিল পরিশোধ না করায় শিক্ষা অধিদপ্তরের কারণে প্রকল্পে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি করেন তিনি।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ভবনের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

অধ্যক্ষ জানান, একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরীক্ষার সময় সীমিত স্থান সংকটের কারণে তিন-চারজন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে বসতে হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময়ও শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে, যা স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করছে।

শিক্ষার্থী আব্দুল মোমেন বলে, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে ক্লাস করি। গরমে ঘেমে উঠি, ঠিকমতো ক্লাসে বসতে পারি না। এই ভবন নির্মাণ হলে আমাদের দুঃখ কমবে।’

স্থানীয় অভিভাবক মো. মনির হোসাইন বলেন, ‘আমার মেয়ে এই মাদ্রাসায় পড়ে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। অনেক বছর ধরে দেখতেছি ভবন নির্মাণ হচ্ছে। নির্মাণের শুরু থেকে ঠিকাদার ১ মাস কাজ করলে ৬ মাস বিরতি নেয়।’

খাগড়াছড়ি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রিসলি চাকমা বলেন, ‘ঠিকাদারকে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা প্রতিনিধি পাঠাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত