Ajker Patrika

‘প্রিডেটরি জার্নালের’ গবেষণায় পদোন্নতি নয়, সিদ্ধান্ত কুবি সিন্ডিকেটের

কুবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ১৭: ০৯
Thumbnail image

শিক্ষকের পদোন্নতি এবং চাকরি স্থায়ীকরণে নিয়োগপত্রে বর্ণিত গবেষণা প্রকাশনা বাধ্যতামূলক এবং তা অবশ্যই স্বীকৃত কোনো জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ‘প্রিডেটরি জার্নালে’ প্রকাশিত গবেষণায় শিক্ষকেরা পদোন্নতি পাবেন না। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রিডেটরি জার্নাল আসলে কোনো জার্নালই না। পৃথিবীর কোথাও এই জার্নাল গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে যা খুশি টাকা দিয়ে প্রকাশ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামের পাশে যদি এই জার্নালের নাম থাকে, তাহলে এটি খুবই অসম্মানজনকভাবে দেখা হয়।

রবিউল আউয়াল আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করে কোনো ধরনের প্রমোশন বা সুবিধা পাওয়া উচিত নয়।’

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আগে প্রিডেটরি জার্নালে যে কেউ গবেষণা প্রকাশ করে প্রমোশন নিয়ে নিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে লক্ষ্য সেটা অসম্পূর্ণ রয়ে যেত। আশা করি, আমরা উন্নতমানের গবেষণার মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেব। এটা এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।’ 

সূত্র মতে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের স্বীয় পদে চাকরি স্থায়ী হওয়ার জন্য চারটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো, প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না; স্বীয় পদে চাকরি স্থায়ী হওয়ার জন্য নিয়োগপত্রে বর্ণিত গবেষণা প্রকাশনা অবশ্যই ‘ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর’সহ স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে; স্থায়ী পদে চাকরি স্থায়ী হওয়ার আবেদন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে পাঠাতে হবে; ‘ফার্স্ট অথোর’ অথবা ‘করেসপন্ডিং অথোর’ ছাড়া একই গবেষণা দিয়ে একাধিক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী হওয়ার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষকের স্বপদে চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ১৭ জনের চাকরি স্থায়ীকরণ হলেও দুজন শিক্ষকের স্বপদে চাকরি স্থায়ী হয়নি বলে জানা গেছে। দুজন শিক্ষক হলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান গবেষণা প্রকাশনাটি পদোন্নতির আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করেননি এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের প্রকাশিত গবেষণাটি প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত হওয়ায় চাকরি স্থায়ী হয়নি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, গবেষণার জন্য যে লজিস্টিক সাপোর্ট এবং পরিবেশ প্রয়োজন তা এখনো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তারপর বললে ঠিক আছে। কিন্তু হুট করে বললে এটা কঠিন হয়ে যায়।

প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করায় নিয়োগ স্থায়ী না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি আবেদন করেছি আরও আগে। কিন্তু কোনো স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করতে হবে এই বিষয়টি এই সিন্ডিকেটে যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আগে উল্লেখ ছিল না। আমি গবেষণা প্রকাশ করেছি, পরে জানলাম এটা প্রিডেটরি জার্নাল। এর আগে উল্লেখ করা উচিত ছিল কোন কোন জার্নালে প্রকাশ হলে নিয়োগ স্থায়ীকরণ করা হবে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যেকোনো শিক্ষকের নিয়োগ স্থায়ী হতে গেলে তাঁর প্রকাশিত গবেষণা ‘ইমপ্যাক্ট-ফ্যাক্টর’সহ স্বীকৃত কোনো জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। কোনো প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশ করলে আপগ্রেডেশনে বিবেচনা করা হবে না। ফলে শিক্ষকেরা ওই ধরনের গবেষণায় নিয়োজিত হবেন যা পজিটিভ প্রভাব ফেলবে এবং হাই কোয়ালিটি জার্নালে প্রকাশ করার জন্য প্রয়াস চালাবেন। এ রকম গবেষণা একজন শিক্ষককে যেমন দক্ষ করে তুলবে, তেমনি শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত