Ajker Patrika

একাদশে ভর্তি বাণিজ্য: তিন গুণ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
Thumbnail image

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুরানপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজ ও গৌরীপুর মুন্সি ফজলুর রহমান সরকারি কলেজের বিরুদ্ধে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, মফস্বল-পৌর ও উপজেলা এলাকায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাবদ নির্ধারণ করা হয়েছে (সেশন চার্জসহ) ১ হাজার ৫০০ টাকা কিন্তু দাউদকান্দির কলেজগুলোতে নেওয়া হচ্ছে এর তিন গুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে মনগড়া ফি আদায়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এখানকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। 

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের ৫ অনুচ্ছেদের ৫.৫-এ উল্লেখ আছে, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেশন চার্জ ও ভর্তি হিসেবে উপজেলা-মফস্বল পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করা যাবে। 

সরেজমিনে উপজেলার কলেজগুলো ঘুরে দেখা যায়, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে উপজেলার বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪ হাজার ৩০০ টাকা, জুরানপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ হাজার টাকা, হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজে ২ হাজার ৮৯৬ টাকা, গৌরীপুর মুন্সি ফজলুর রহমান সরকারি কলেজে ৩ হাজার ২০০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হচ্ছে। 

জাহিদুল নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘কৃষি কাজ করে খুব কষ্ট করে সন্তানকে পড়াচ্ছি। তার মধ্যে করোনায় একেবারে আমরা বিপর্যস্ত। উপজেলার বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হতে ৪ হাজার ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে অভিভাবক হিসেবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ 

মোছা. নাজমা খানম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘খুব কষ্টে সন্তানের পড়ালেখা অব্যাহত রেখেছি। সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি ফি বেশি হওয়ার কারণে এখনো ভর্তি করাতে পারিনি।’ 

ভিপি ডা. শহিদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘উপজেলার হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজে ২ হাজার ৮৯৪ টাকা দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। ফি খুব বেশি মনে হচ্ছে। 

মো. ইয়াছিন নামে এক শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার গৌরীপুর মুন্সি ফজলুর রহমান সরকারি কলেজে ৩ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে।’ 

মো. জিলানী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরিবারের টাকার সংকট ছিল। এরপরও জুরানপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি।’ 

এ প্রসঙ্গে বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করি। পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ হাজার ৩০০ টাকা করে নিচ্ছি।’ 

গৌরীপুর মুন্সি ফজলুর রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি রেজুলেশনের মাধ্যমেই আমরা ভর্তিতে ৩ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।’ 

হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ছালেহ আহম্মেদ ফকির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারি রেজুলেশলন অনুযায়ী ভর্তিতে ২ হাজার ৮৯৪ টাকা নিচ্ছি।’ 

দাউদকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি নীতিমালার বাইরে এমপিওভুক্ত কলেজগুলোর অতিরিক্ত ফি আদায়ের সুযোগ নেই। অবশ্যই এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি উপজেলার কলেজগুলোতে একাদশে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নাকি অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে, কেন অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চেয়েছি এবং একই সঙ্গে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ৫০০ টাকার অতিরিক্ত টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া জন্য সকল কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত